নিমপাতা ডায়াবেটিস কমাতে ও চর্মরোগ সারতে সাহায্য করে।

নিমপাতার ভয়ে এইডস ভাইরাসও কাঁপে। নিমপাতা এইডস রোগকেও প্রতিহত করে। আসলে বেশি ভূমিকার দরকার নেই নিমপাতার উপকারিতা সম্পর্কে বলার জন্য।

নিমপাতার রস ও মধু খেয়ে জন্ডিস সেরে গেছে এবং সকালে খালি পেটে নিমপাতা চিবিয়ে খেয়ে ডায়াবেটিসে কাজ হয়েছে, চুলকানি, খোসপাঁচড়া সেরে গেছে – এগুলো প্রমাণিত।

সত্যি অবাক হতে হয় প্রকৃতি কিভাবে এতো সমাধান নিম নামক একটি গাছের পাতা, ফুল, ফল ও ডালে ধারণ করে রেখেছে।

আয়ুর্বেদে নিম পাতাকে “স্কিনের রানী” বলা হয়। নিম পাতার ঔষধী গুন এতই বেশী যে এটাকে “গ্রাম্য ঔষুধের ফার্মেসী” বলা হয়। নিমগাছ আমরা সবাই চিনি। এটার উপকারীতা সম্পর্কে কম বেশি জানি।

বাড়ির আঙ্গিনায় ও রাস্তার পাশে নিম গাছ দেখা যায়। কথায় আছে বসত বাড়ির দক্ষিণ পাশে নিম গাছ থাকা ভালো।

নিম পাতার উপকারীতা:

বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ঔষধী গাছ হিসাবে ৫০০০-বছর ধরে নিম গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিমের ডাল, পাতা, ফুল, বাকল সব কিছুই কাজে লাগে। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ।

১৩০টি ঔষধী গুন সম্পন্ন নিম পাতা, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া নাশক হিসাবে খুবই কার্যকরী। এটাতে উচ্চ মাত্রায় ক্লোরোফিল থাকায় এটা মানব শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতে চমৎকার কাজ করে।

নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার রাখতে খুবই ভালো কাজ করে। নিচে নিম পাতার কিছু ঔষুধী গুনের কথা আলোচনা করা হল-

ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে বা পেটের সমস্যায়:

আমরা অনেকেই বেগুন ভাজা খেতে পছন্দ করি। বেগুন ভাজা প্রায় হয়ে এলে কচি নিমপাতা দিয়ে অল্প একটু ভেজে নামিয়ে নিন।

এটা গরম ভাতের সাথে খেলে পেটের অনেক উপকার পাবেন। এছাড়া অজীর্ণ সমস্যায় অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে পাতলা পায়খানা বা পেটের অসুখে নিমপাতার রস খেলে উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস রোগ সারাতে বা রক্তের সুগার কমাতে:

নিমপাতার রস নিয়মিত খেলে ৩০ থেকে ৭০ ভাগ ইনসুলিন নেওয়ার প্রবনতা কমে যায়। ডায়াবেটিস-এর মতো রোগকে অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে নিমপাতা।

এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ১-২ টেবিল চামচ নিমপাতার রস খেতে পারেন।

খোস পাচড়া ও চুলকানি সারতে:

খোস পাচড়াচুলকানি সারতে নিমপাতা অতুলনীয়। এক্ষেত্রে নিমপাতা ও নিম গাছের ফুল দুটোই ভালো কাজ করে। খোস পাচড়া- খোস পাচড়া হলে নিমপাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোস পাচড়া কমে যায়।

এছাড়া নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষত কমে যায়।

চুলকানি- চুলকানি হলে নিমপাতা বা নিমফুল বেটে গাঁয়ে কয়েকদিন ধরে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

এছাড়া পাতা ভেজে গুড়া করে সরিষার তেলের সাথে মিষিয়ে চুলকানিতে লাগালে যাদুর মতো কাজ করে।

ত্বকের যত্নে ও ব্রণ দূর করতে:

স্থায়ীভাবে ব্রণ ও যেকোনো কালোদাগ দূর করতে নিমপাতার জাদুকরী ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

নিমপাতার সাথে একটু হলুদ মিশিয়ে বেটে মুখে লাগালে ব্রণ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাই।

উকুন বিনাশে:

উকুন বিনাশে নিমের পাতা অতুলনীয়। নিমপাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে ঘন্টা খানেক রাখুন, ১ ঘন্টা অপেক্ষার পর চুল ধুয়ে ফেলুন ২/৩ দিনের মধ্যে উকুন মরে যাবে।

পেটের চর্বি কমাতে নিম চা (Neem Tea) খান:

ঘরে বসে নিম চা বানিয়ে নিন। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে যন্ত্রনায় আছেন। ওজন কমাতে নিমচা খুবই কার্যকর। তরতাজা নিমপাতা সংগ্রহ করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন।

এবার চা পাতা যেমনভাবে আমরা গরম পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিই ঠিক তেমন ভাবে ধোয়া ফ্রেশ নিমপাতা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে ওর মধ্যে তেতো ভাব দূর করার জন্য ১-২ চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।

একটু লেবুর রসও মিশিয়ে দিতে পারেন। ওজন কমাতে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।

দাঁতের জন্য ভালো:

দাঁতের সুস্থ্যতায় নিমের ডাল দিয়ে ব্রাশ করার প্রচলন রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ফাঁকে জীবাণুর সংক্রমণ রোধে নিম বেশ কার্যকরী।

নিমের পাতা ও ছালের গুড়া কিংবা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত হবে মজবুত, রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও।

নিম পাতার রস পানিতে মিশিয়ে মুখ আলতোভাবে ধুয়ে ফেললে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত ও মাড়ির ব্যথা কমে যায়।

বসন্ত রোগে ভালো কাজ করে:

বসন্ত রোগে রোগীকে নিমপাতার বিছানায় শোয়ালে জীবাণুনাশক হিসেবে ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে।

কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়। এছাড়া হাম রোগীদের জন্য নিমপাতা খুব উপকারী।

এলাৰ্জিকে দূরে রাখতে নিমপাতা:

কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলার্জি খুব বেশি সমস্যা করে না। এলার্জি তাড়াতে এক কেজি পরিমান নিমপাতা নিন।

ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে পাটায় গুঁড়ো করে একটা বয়ামে সংরক্ষণ করুন।

প্রতিদিন ২-৩ চামচ নিমপাতার গুঁড়া ইসবগুলের ভূসি ও পানি দিয়ে খান। সকালে খালি পেটে এবং রাতে শোবার আগে অন্তত ১ মাস নিয়মিত খান।

চুলের জন্য নিমপাতা:

উজ্জ্বল ও সুন্দর চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। চুলের খুসকি দূর করতে শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।

চুলে প্রতি সপ্তাহে ১ দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টারমত রাখুন। এবার ১ ঘন্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমার সাথে সাথে চুল নরম ও কোমল হবে।

এক চামচ আমলকির রস, এক চামচ নিমপাতার রস, এক চামচ লেবুর রস, প্রয়োজন অনুযায়ী টকদই মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।

লাগানোর পর আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন তারপর শ্যাম্পু করুন। এতে চুল খুশকি মুক্ত হবে। পাশাপাশি নিমতেল ব্যাবহার করতে পারেন।

কৃমি দূর করে:

পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

এই জন্য ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের গুঁড়ো দিনে ৩ বার সামান্য গরম পানিসহ খাওয়াতে পারেন। এতে করে কৃমি কমে যাবে।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে:

নিমপাতা ম্যালেরিয়ার মতো দুরারোগ্য রোগকে প্রতিহত করে। নিমপাতার রস এক গ্লাস পানিতে গুলে খেয়ে নিন। এটা নিয়মিত খেলে ম্যালেরিয়া ভালো হয়।

এছাড়াও নিমপাতা সিদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করে স্প্রে বোতলে রাখুন। প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমে যাবে

জন্ম নিয়ন্ত্রণে নিম:

নিমতেল একটি শক্তিশালী শুক্রাণুনাশক হিসাবে কাজ করে।

ভারতীয় বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, নিমতেল মহিলাদের জন্য নতুন ধরণের কার্যকরী গর্ভনিরোধক হতে পারে। এটি ৩০-সেকেন্ডের মধ্যে শুক্রাণু মেরে ফেলতে সক্ষম।

নিমপাতার গুনাগুনের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিম বৃক্ষকে “একুশ শতকের বৃক্ষ” বলে ঘোষণা করেছে।

সতর্কতাঃ

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন।

আপনি যদি কোনো জটিল বা গুরুতর রোগে ভুগে থাকেন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।