ধুন্দল শরীর ঠান্ডা রাখে, ডায়াবেটিস, হার্ট ও কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ভালো।

বাংলাদেশ তথা গোটা এশিয়া মহাদেশে সবজির মধ্যে ঝিঙার মতো ধুন্দলও খুব জনপ্রিয়। সবুজ রঙের ধুন্দুল সবজির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত।

এই সবজিটি এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। বিভিন্ন মাছের সাথে ধুন্ধলের কেমিস্ট্রি একেবারে অনবদ্য।

সকাল বা দুপুরে গরম ভাতে ধুন্দল দিয়ে রান্না করা এক বাটি মাছের ঝোল বা নারকেল, চিংড়ি দিয়ে ধুন্দল ঘন্ট হলে আর কিছু লাগে না।

এই সবজির তরকারি খুবই সুস্বাদু। এটি ইংরেজিতে Luffa, Sponge gourd, হিন্দিতে নিনুয়া এবং চীনা ভাষায় সি গুয়া লুও নামে পরিচিত।

এটি দেখতে অনেকটা ঝিঙের মতো যা জুকিনি, কোর্জেট নামেও পরিচিত। দক্ষিণ আমেরিকার জনপ্রিয় একটি খাদ্য এই সবজি।

বর্তমানে জাপান, চীন, রোমানিয়া, ইতালি, তুরস্ক, মিসর এবং আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা চাষের মাধ্যমে এটির উৎপাদন করে।

এতে রয়েছে পানি, ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “এ”, ফোলেট এবং বিটা ক্যারোটিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, সেলেনিয়াম। রস করে খান তাহলে ওষুধের মতো কাজ করবে।

ধুন্দলের বৈজ্ঞানিক নাম: (Luffa aegyptiaca)/Luffa cylindrica. ঝিঙের মতো এরাও একই গণের উদ্ভিদ। এটি লতাগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।

এটি গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চাষ করা হয়ে থাকে। ধুন্দল যখন পেঁকে যায় বা বুড়ো হয় তখন ভেতরের অংশটি খুব আঁশযুক্ত হয়।

ধুন্দলের স্বাস্থ্য উপকারিতা

অতি প্রাচীনকাল থেকে স্নান প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে গা ঘষার জন্যে ধুন্দল ছোবড়ার ব্যবহার হয়ে আসছে।

পাকা ধুন্দল ফলকে শুকিয়ে ছোবড়া তৈরি করা হয়। ধুন্দল এর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো –

হজম ক্ষমতা বাড়ায়:

ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় পেটের নানাবিধ সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও পাশাপাশি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

হার্ট ভালো রাখে:

ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম এবং ফোলেট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় হার্ট ভালো রাখে। এতে থাকা ফাইবার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

দৃষ্টিশক্তি ভালা রাখে:

জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা ভিটামিন-“সি”, ভিটামিন-“এ”, কপার, ভিটামিন-“ই” এবং জিঙ্ক গ্রহণ করেছেন, তাদের ছয় বছরের সময়কালে ম্যাকুলার অবক্ষয়ের সম্ভাবনা ২৫% হ্রাস পেয়েছে।

গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, ভিটামিন-“এ” শুস্ক ও রুক্ষ ত্বককে সজীব করে।

আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ভিটামিন-“এ” সমৃদ্ধ ধুন্দলের অন্তর্ভুক্তি চোখের অসুস্থতা কমাতে সহায়তা করতে পারে।

ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে:

পাচনতন্ত্রের এনজাইম তৈরির জন্য ম্যাঙ্গানিজ প্রয়োজনীয়, যা গ্লুকোনোজেনেসিস নামক প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী।

ম্যাঙ্গানিজ ইনসুলিনের নিঃসরণকে উৎসাহিত করে, লিপিড পারক্সিডেশন হ্রাস করে এবং মাইটোকন্ড্রিয়াল ফাংশন বাড়ায়।

অ্যানিমিয়া দূর করুন:

ধুন্দলে রয়েছে ভিটামিন বি-৬। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে ভিটামিন বি-৬ অপরিহার্য যা কোষগুলিতে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে এবং আয়রনকে একত্রিত করে।

রক্তাল্পতা অপর্যাপ্ত লাল রক্ত কোষের ফলাফল। সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ খাওয়া রক্তাল্পতার লক্ষণগুলি হ্রাস করে এবং এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

ওজন কমাতে সহায়তা করে:

এতে স্টার্চ ও কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং ফাইবার ও পানির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই এটি স্বল্প ফ্যাটযুক্ত খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।

অল্প সময়ের মধ্যেই শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণ আনে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-“সি”।

ধুন্দুলে আরো আছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিমাইক্রোবিয়াল, এন্টিক্যান্সার, এন্টি আলসার, গ্যাসট্রোপ্রোটেকটিভ, লাইপোলিপিডেমিক, ও হাইপোলিপিডেমিক গুনাবলী যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো:

এই সবজিতে থাকা লুটেইন এবং জেক্সানথিন নামক দুটি ক্যারোটিনয়েড হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করে।

এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন-“কে”, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেট হাড়ের বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী।

ত্বক ও চুল ভালো রাখে:

সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ভিটামিন-“সি” এর উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ ত্বকের শুষ্কতা, চুলকানিকে হ্রাস করতে পারে এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়াটি ধীর করে দেয়।

প্রোটিন তৈরির জন্য পেশীবন্ধ, ত্বক, রক্তনালী এবং লিগামেন্ট গঠনের জন্য ভিটামিন-সি প্রয়োজনীয়।

এটি ক্ষত নিরাময়ে প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং এটি একটি ক্ষত টিস্যুও গঠন করে। মাথার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ধুন্দুলে থাকা ভিটামিন বি-২, ভিটামিন-“সি” এবং জিঙ্ক মাথার চুলের বৃদ্ধিতে ও চুলের গোড়া শক্ত করে।

এছাড়া শুষ্ক, রুক্ষ চুল ও খুশকি দূর করে।

সতর্কতা

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

সূত্রঃ

https://www.healthbenefitstimes.com/luffa/