দাঁতের জন্য সবচেয়ে খারাপ বা ক্ষতিকর কিছু খাবার।
দাঁতের ক্ষয় বা দাঁতের ব্যথা মানে খাবার খেতে সমস্যা। দাঁতে সমস্যা মানে কথা বলতে সমস্যা। সর্বোপরি দাঁতে সমস্যা বা Poor ওরাল হেলথ মানে সকল প্রকার সামাজিক কাজে সমস্যা।
আমরা অনেকে খাবারের ব্যাপারে যেমন সচেতন না তেমনি দাঁতেরও যত্ন সঠিকভাবে নিই না। ফলে দাঁতে Plaque জমা হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া থাকে। আমরা প্রতিদিন যে, চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খাই সেটার সাহায্যে এই ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিড উৎপান করে, ফলস্বরূপ দাঁতে Cavities বা গহ্বর সৃষ্টি হয়।
মানুষ তার কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করে থাকে। এজন্যই বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। আপনি যেমন খাবার খাবেন সেই অনুযায়ী আপনার শরীর ভালো-মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আপনি যা খাচ্ছেন তা আপনিই।
অনেকগুলি খাবার এবং পানীয় Plaque বা ফলক তৈরি করতে পারে যা আপনার দাঁতে মারাত্মক ক্ষতি করে। প্লেক একটি ব্যাকটিরিয়ায় জনিত মাড়ির রোগ এবং দাঁতের ক্ষয়তে অবদান রাখে।
দাঁতের ক্ষয় ৬ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের সবচেয়ে সাধারণ একটি রোগ।
মুখের সৌন্দর্যের রানী-দাঁতের জন্য ক্ষতিকর খাবার:
আপনার দাঁতগুলির জন্য খারাপ এমন খাবার খাওয়া মানে Plaque জমিয়ে ব্যাকটেরিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার থেকে দাঁতে ক্ষয় বা গহ্বর। নীচে, আপনার দাঁতগুলিকে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য আপনার কোন খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত বা কমপক্ষে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে তা বর্ণনা করা হলো:
টক ক্যান্ডিস:
বাচ্চাদের মুখরোচক খাবারগুলোর মধ্যে অনেক খাবারই দাঁতের জন্য ক্ষতিকর সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তেমনই একটি খবর হলো টক ক্যান্ডি বা টক মিষ্টি ক্যান্ডি। এগুলোতে বিভিন্ন ধরণের অ্যাসিড থাকে। তাছাড়া এগুলো অনেকক্ষন মুখে নিয়ে চুষতে হয় এবং দাঁতে আঁঠালো ও রবারের মতো লেগে থাকে। ফলে দাঁতের ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আচার:
ভিনেগারে অ্যাসিড রয়েছে। এই অ্যাসিডটি কেবল দাগের কারণ হতে পারে না তবে এটি আপনার দাঁতগুলির এনামেলের জন্যও ক্ষতিকর। বেশিরভাগ আচারযুক্ত খাবারে চিনিও থাকে, যা Cavities বা গহ্বরগুলির জন্য দায়ী।
অ্যালকোহল বা মদ:
আমরা সকলেই জানি যে, অ্যালকোহল পান করা ঠিক স্বাস্থ্যকর নয়। আপনি এলকোহল বা মদ পান করলে এর পরবর্তীতে এটি মুখের শুস্কতা বাড়িয়ে দেয়। শুষ্ক মুখে লালা অভাব হয় যা আমাদের দাঁত সুস্থ্য রাখতে প্রয়োজন।
লালা আপনার দাঁতে লেগে থাকা খাবার থেকে বাধা দেয় এবং খাবারের কণাগুলি ধুয়ে দেয়। এমনকি এটি দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির রোগ এবং অন্যান্য মৌখিক সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি মেরামত করতে সহায়তা করে।
সাদা এবং লাল ওয়াইনে ইরোসিভ অ্যাসিড রয়েছে, যা এনামেলকে নরম করে। রেড ওয়াইনে ট্যানিন নামক যৌগ রয়েছে যা আপনার মুখ শুকিয়ে এবং দাঁতে দাগ তুলতে পারে। যদি আপনি ওয়াইন পান করার পরিকল্পনা করেন তবে আপনার দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না।
কার্বনেটেড পানীয়:
কার্বনেটেড বেভারেজ বা কোমল পানীয়তে অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্তিম মিষ্টি ও সোডা থাকে। এই সোডায় থাকে ফসফরিক অ্যাসিড যেটা এই পানীয়গুলোতে একটি টানযুক্ত ও অ্যাসিডযুক্ত স্বাদ দেয়। এই ফসফরিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর ও অন্যান্য রেনাল সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী।
অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দিয়ে তৈরি কোমল পানীয় দাঁত ক্ষয় সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে। এছাড়া চিনি যুক্ত কার্বনেটেড পানীয় দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে থাকে। এটি স্পার্কলিং ওয়াটার, ক্লাব সোডা, সোডা ওয়াটার, সেল্টজার পানি এবং ফিজি জল হিসাবেও পরিচিত।
কার্বনেটেড সোডাস দাঁতের এনামেল আক্রমণ করার জন্য ফলকে আরও অ্যাসিড তৈরি করতে সক্ষম করে। তাই আপনি যদি সারাদিন সোডা চুমুক দেন তবে আপনি অবশ্যই অ্যাসিডে দাঁত আবরণ করছেন। এছাড়াও এটি আপনার মুখ শুকিয়ে যায়, এর অর্থ আপনার লালা কম।
পটেটো চিপস:
মচমচে সুস্বাদু পটেটো চিপস বা আলু চিপস আমাদের ছোট-বড় সকলকে আনন্দিত করে তোলে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই যে, এগুলোতে স্টার্চ, প্রিজারভেটিভ ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ থাকে। এগুলো শর্করাতে রূপান্তরিত হয়, দাঁতে আটকে থাকে এবং ব্যাকটেরিয়াকে উৎসাহিত করে। সুতরাং দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়।
শুকনো ফল:
অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনিযুক্ত শুকনো ফল কিশমিশ, খেজুর, এপ্রিকট, prunes, fig-দাঁতের ক্ষতি করে থাকে। এগুলো আঁঠালো, দাঁতে লেগে থাকে।
সাইট্রাস ফ্রুটস:
লেবুজাতীয় সকল ফল সাইট্রাস ফ্রুট নামে পরিচিত। কমলা, জাম্বুরা এবং লেবু-এগুলো সুস্বাদু এবং ভিটামিন সি দিয়ে ভরা থাকে তবে তাদের অ্যাসিডের পরিমাণ দাঁতের এনামেলটি ক্ষয় করতে পারে এবং দাঁতে ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
সতর্কতাঃ
জগৎটাই মিষ্টি বা চিনিময়। আমরা প্রতিদিন চিনি বা শর্করাযুক্ত খাবার খেয়ে থাকি। শর্করা ব্যাকটেরিয়াগুলিকে অ্যাসিডগুলি বের করে দেয় যা দাঁতের এনামেলকে আক্রমণ করে। যখন এনামেলটি ভেঙে যায় তখন গহ্বরগুলি বিকাশ লাভ করে থাকে। চিনি কম খান বা খাওয়ার পরে দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ করুন।
কীভাবে আপনি আপনার মুখের উপর সর্বনাশ থেকে বাঁচতে পারবেন? দিনে কমপক্ষে দু’বার দাঁত ব্রাশ করা এবং নিয়মিত চিকিৎসা করা এবং ডেন্টিস্টের সাথে নিয়মিত পরিদর্শন করা ছাড়াও উপরের খাবারগুলি এড়াতে বা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করুন। আপনার মুখকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন এবং ফ্লোরাইড rinses এবং ওরাল হাইড্রেশন সমাধান ব্যবহার করুন।