ত্বকের যত্নে পাঁকা পেঁপে।
পেঁপে আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি ফল। সবজি হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। সারা বছর পাওয়া যায় বলে এর দাম ও খুব বেশি পড়ে না। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন এবং ভিটামিন “সি” রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
শুধু খাবার হিসেবে নয়, রূপচর্চায়ও পেঁপের তুলনা হয় না। ত্বকের যত্নে পাকা পেঁপে বেশ উপকারী। অনেকেই পাকা পেঁপে খেতে ভালোবাসেন। শুধু কয়েক টুকরো সেখান থেকে নিয়ে মুখে মাখুন।
ত্বকের একাধিক সমস্যার সমাধান করবে এই পাকা পেঁপে। ত্বক, চুলসহ নানান ধরণের চর্চায় একে কাজে লাগানো যায়।
ত্বকের যত্নে পাঁকা পেঁপে
পাঁকা পেঁপে এর প্যাক ত্বককে করে মসৃণ এবং উজ্জ্বল। আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, ত্বকের যত্নে পাঁকা পেঁপের জাদুকরী ব্যবহার সম্পর্কে-
ব্রণের দাগ দূর করতে:
ব্রণের কারণে হওয়া দাগ নিরাময় করতে পারে পাঁকা পেঁপে। মুখের অন্যান্য যেকোনো দাগ যেমন মেসতা, ফুস্কুড়ির দাগও খুব সহজেই দূর করে দিতে পারে। পেঁপের প্যাপেইন এনজাইম ত্বক পরিষ্কার করার উপকরণ। এটি মুখের দাগ ও ব্রণ দূর করতেও সমানভাবে পারদর্শী।
কয়েক টুকরো পেঁপে নিয়ে এর জুস তৈরি করুন। এবার কটন বলের সাহায্যে দাগ এবং ব্রণের জায়গা গুলোতে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এই পদ্ধতি অবলম্বণ করুন। ব্রণ বা দাগ কোনটাই থাকবে না।
ত্বকে পুষ্টি যোগায়:
মিষ্টি পাকা পেঁপেতে ভিটামিন “এ” এবং পাপেইন এনজাইম রয়েছে যা ত্বকের চামড়া শুকিয়ে যাওয়া রোধ করে। এটি ত্বকের আর্দ্রতাও ফিরিয়ে আনে। এর জন্য এক ফালি পাকা পেঁপের সাথে তিন টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
রোদে পোড়া এবং দাগ দূর করে:
পেঁপের বিভিন্ন উপকারি এনজাইম মুখের রোদে পোড়া দাগ এবং কালোভাব দূর করতে সাহায্য করে। নাক বা থুতনির কালো দাগ, কনুই বা হাটুর কালো দাগসহ বিভিন্ন দাগ দূর করে পেঁপে।
এক্ষেত্রে এক টুকরো পেঁপে, এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে নিন। কালো দাগের জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। যেকোনো ধরণের দাগ কমাতে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার এই মাস্ক ব্যবহার করুন।
বলিরেখা দূর করে:
পেঁপেতে থাকা ভিটামিন “এ” মুখের মরা চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করে এবং ত্বককে কোমল করে। এছাড়া পেঁপেতে থাকা ভিটামিন “সি” ও “ই” ত্বককে করে আরও প্রাণবন্ত এবং ফ্রেশ করে তোলে।
হাফ কাপ পেঁপে নিয়ে পেস্ট করে তাতে এক টেবিল চামচ দুধ এবং অল্প একটু মধু মিশিয়ে নিন। মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বক উজ্জ্বল করে:
প্রাকৃতিকভাবে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে চাইলে পাকা পেঁপে বেছে বেছে নিতে পারেন। প্রথমে পেঁপে ম্যাশ করে নিন। তারপর এতে একটা গোটা পাতিলেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ পুরো মুখে, গলায়, হাতে মেখে আধঘণ্টা রাখুন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে:
এতে থাকা ভিটামিন “ই” আর “সি” ত্বক তরতাজা করে তোলে। পাকা পেঁপে আধকাপ চটকে তাতে এক টেবিল চামচ দুধ আর অল্প মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট মতো রেখে ঠান্ডা পানি ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার এটি ব্যবহার করলে ম্যাজিকের মতো ফল পাবেন।
ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে:
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পেঁপের প্যাক খুব কার্যকরী। ৩ চামচ পাকা পেঁপে, ২ চামচ মধু এবং ১ চামচ পাতিলেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই প্যাক খুব ভাল কাজ করে। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২ বার এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন।
গোড়ালির ফাটাভাব কমায়:
পাঁকা পেঁপে চটকে নিন তারপর গোড়ালির ফাটা জায়গাগুলোয় লাগান। ২০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি ধুয়ে নিন। এতে গোড়ালির ফাটা, শুকনো চামড়া, চুলকানি বা লালচেভাব সবই কমে যাবে। কিন্তু পা ধুয়ে নেওয়ার পর খানিকটা অলিভ অয়েল পায়ে মেখে নেবেন।
- পেঁপে খেলেই সব হজম। পেটের সমস্যা বা হজমের জন্য পেঁপে কতটা কার্যকর?
- পেঁপের জুস শরীর ঠান্ডা রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও তারুণ্য ধরে রাখে।
- কাঁচা পেঁপে পুষ্টির পাওয়ার হাউস যা পেট ঠিক রাখে, ব্যথা কমাতে ও ত্বকের জন্য দুর্দান্ত।
- পেঁপে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিকস প্রতিরোধ করে এবং বয়স ধরে রাখে।
- পেঁপের বীজ হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- পেঁপের পাতা ডেঙ্গু জ্বর কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।