তালমিছরি সর্দি-কাশি কমাতে ও রক্তসল্পতা দূর করতে কার্যকরী।
বহুদিন ধরে আমাদের সমাজে তালমিছরি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নানা ধরনের আয়ুর্বেদিক ঔষুধে তালমিছরি ব্যবহার করা হয়।
সাধারণ সর্দি কাশিতে তালমিছরি খুবই কার্যকরী। এটি তাল গাছের রস থেকে তৈরি করা হয় তাই এর নাম তালমিছরি।
সাদা মিছরি খুবই শক্ত হয় কিন্তু তালমিছরি একটু নরম হয়ে থাকে। তালমিছরির রং একটু সোনালী এবং খেতেও দারুন।
তালমিছরি প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়ার ফলে একে বলে আনপ্রসেসড সুগার।
তালমিছরিতে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন: ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস ইত্যাদি।
এছাড়াও ভিটামিন B1, B2, B3, B6 এবং B12 এর একটি ভাল উৎস হলো তালমিছরি।
তালমিছরি কিভাবে তৈরি করা হয়?
খাঁটি তালের রস থেকে তৈরি হয় তালমিছরি। তালের রস জ্বাল দেওয়া হয় একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এরপরে সেটিকে ঢালা হয় ট্রেতে বা কোনো পাত্রে।
এরপরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এই ট্রেগুলিকে চট দিয়ে ঢেকে রাখা হয় একটি বন্ধ ঘরে।
সপ্তাহ খানেক পরে ওপরে ও নিচের অংশগুলি শুকিয়ে দানাতে পরিণত হয়, অর্থাত্ তালমিছরিতে পরিণত হয়।
মিছরি তৈরি করার মরসুম হল চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণের প্রথমার্দ্ধ পর্যন্ত, এই সময়েই বানানো হয় তালমিছরি। এভাবেই তৈরি হয় আমাদের অতিপরিচিত তালমিছরি।
তালমিছরির উপকারিতা
তালমিছরি অনেক উপকারী গুণে সমৃদ্ধ। এটি রক্তসল্পতা দূর করতে, হাড়ের সমস্যা দূর করতে, সর্দি কাশির উপশম করতে, চোখের দৃষ্টি ঠিক রাখতে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক উপকারী। নিচে এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
সর্দি কাশি দূর হয়:
তালমিছরি সর্দি-কাশি দূর করতে পারে। তাল মিছরির রস কাশি উপশম করে ও গলার শ্লেষ্মা নরম করে দিতে সাহায্য করে।
এক টুকরো তালমিছরি মুখে রাখলে কাশিতে অনেক আরাম পাবেন বা তুলসী রসের সাথে তালমিছরি খেতে পারেন।
কাশিতে গলায় ব্যথা শুরু হলে এক টুকরো তাল মিছরি, গোল মরিচ ও মধু দিয়ে পেস্ট বানিয়ে খেতে পারেন।
হাড়ের জন্য ভালো:
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের সমস্যা খুবই সাধারণ সমস্যা। হাড় ক্ষয় ও হাটু ব্যথা ইত্যাদি। এক্ষেত্রে তালমিছরি খুবই উপকারী।
তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
রক্তসল্পতা দূর করতে:
যাদের রক্তসল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য তালমিছরি খুবই উপকারী। কারণ তালমিছরিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে।
বিশেষ করে মেয়েদের জন্য তাল মিছরি খুব বেশি উপকারী। আয়রন রক্তের লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:
এছাড়া তালমিছরি চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বাদাম, মৌরি, তাল মিছরি ও গোল মরিচের গুঁড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে চোখ ভালো থাকে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে:
তালমিছরির গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স এর মান মাত্র ৩৫ যা রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে না। এটি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
এছাড়া যারা ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে রয়েছে বা যাদের ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে তাদের জন্য সাদা চিনির পরিবর্তে তালমিছরি ভালো।
নতুন মায়েদের জন্য:
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে তালমিছরি খুব উপকারী। কালোজিরার এর সাথে তালমিছরি গুঁড়ো করে গরম দুধের সাথে দিনে দুবার খেলে বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া তালমিছরি পেটে ব্যথার উপশম করতে পারে। নিম পাতার সঙ্গে তালমিছরি খেলে পেটের ব্যথা কমে যায়।
বাচ্চাদের জন্য ভালো:
শিশুদের এবং বেড়ে ওঠা বাচ্চাদের জন্য খুব উপকারী তালমিছরি। এটি বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বাচ্চাদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য ভালো।
সতর্কতা
আসলে তালমিছরি প্রাকৃতিক মিষ্টি তবে অলৌকিক খাবার নয়। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত নয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়া ভালো।
এছাড়া আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে তালমিছরি খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
সূত্র: wikipedia, ndtv