ডিম চুল পড়া বন্ধ করে, চুল ঘন করে ও চুলে প্রোটিন যোগায়।
স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঘন কালো ও মসৃণ চুল কে না চায়। কিন্তু সেই চুল যদি কোনো কারণে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় তবে এই নিয়ে চিন্তার আর শেষ থাকে না।
আর তাই চুলকে যদি আপনি ঘন কালো ও প্রাণবন্ত করে তুলতে চান তাহলে ডিমই হতে পারে এর একমাত্র সমাধান।
আজ পর্যন্ত ডিম চুলের জন্য ব্যবহার করেননি এমন মহিলার সংখ্যা পাওয়া খুব কঠিন। খানিক গন্ধ আছে বটে, কিন্তু সেটা সহ্য করলে যে উপকারটি পাওয়া যায় তার তুলনা নেই।
ডিমে থাকে প্রোটিন, যা চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকের পুষ্টি বাড়িয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুল ঘন করতে ডিমের জুরি মেলা ভার।
ডিমের কুসুমের মধ্যে থাকা বায়োটিন চুলকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে।
ডিমে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, প্রোটিন এবং ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স রয়েছে যা দুর্বল চুলের জন্য দারুন উপকারী। এগুলো চুল পড়া রোধ করে। সেই সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়।
চুলের যত্নে ডিমের উপকারিতা
যখন আপনি চুলে ডিম লাগাবেন তখন এর উপকারিতা কতটা মূল্যবান তা বুঝতে পারবেন। কিভাবে ডিম আপনার চুলের উপকার করে তা নিচে দেওয়া হলো-
চুল পড়া বন্ধ করে:
ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে দই মিশিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার তালুতে ঘষে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এতে করে চুল পড়াতো বন্ধ হবেসেই সঙ্গে চুল হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
চুল ঘন করতে:
স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঘন কালো চুলের জন্য ডিম খুবই কার্যকরী। সেক্ষেত্রে, একটা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন।
তারপর সবকিছু এক সঙ্গে ঘন করে ফেটিয়ে নিন। স্ক্যাল্প ও চুলে ভাল করে লাগিয়ে নিন।
১৫ থেকে ২০ মিনিট পর প্রথমে ঠান্ডা জলে ধুয়ে তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এভাবে কিছু দিন করলে চুল হয়ে উঠবে ঘন কালো ও মসৃণ।
চুল সিল্কি করতে:
এক কাপ দইয়ের সঙ্গে একটা ডিমের কুসুম মিশিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। চুল থেকে ডিমের গন্ধ বেরোলে হালকা শ্যাম্পু করে নিন।
কন্ডিশনার হিসেবে:
একটা ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এর সঙ্গে হালকা গরম জল মিশিয়ে পাতলা করে নিন।
চুল শ্যাম্পু করার পর এই কন্ডিশনার গোটা চুলে লাগান। চুলের ডগা বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। তাই ডগায় ভাল করে লাগাবেন। কিছুক্ষণ রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
রুক্ষ চুলের যত্নে:
একটা ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ দই, আধ চা চামচ নারকেল তেল বা আমন্ড তেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন।
এই প্যাক চুলে ভাল করে লাগান। দু’ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক লাগালে চুলে রুক্ষ ভাবটা আর থাকবে না আর সেই সঙ্গে চুল নরম হবে।
আগা ফাটা রোধ করে:
ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন ভালো করে। এই হেয়ার প্যাকটি চুলের আগায় লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রাখুন।
তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান। এতে করে চুলের আগা ফাটা দূর হবে।
চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে:
ভঙ্গুর চুলের জন্য ডিমের হেয়ার প্যাক খুবই কার্যকরী। ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করুন হেয়ার প্যাক।
কিছুক্ষণ চুলে লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার লাগান। সরাসরি ডিমের সাদা অংশ লাগালেও উপকার পাবেন।
চুল নরম ও ঝলমলে করে:
প্রথমে একটি ডিম ফাটিয়ে নিন এবং একটি কলা চটকে নিন। এই দুটি মিশ্রণ একসঙ্গে মিশিয়ে ৩ চামচ কাঁচা দুধ, ৩ চামচ মধু ও ৫ চামচ অলিভ অয়েল মেশান।
এরপর হেয়ার প্যাকটি চুলে লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নরম ও ঝলমলে চুলের জন্য সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন এই পদ্ধতি।
স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও মজবুত চুল পেতে:
আমলা চুলের জন্য একটি অসাধারণ উপাদান। এটি চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের আগা ফাটা প্রতিরোধ করে আর ডিম চুলের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে চুলকে করে সিল্কি, শাইনি ও প্রাণবন্ত।
কাজেই এই দুই উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে তা যে চুলকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল ও মজবুত করে তুলবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
একটা ডিম ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এবার এতে আমলা পাউডার মেশান। কাটা চামচ দিয়ে ভালো করে ফেটান যাতে করে কোনো দানা দানা না থাকে। এবার মাথা ও চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন।
তারপর কোনো ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনার লাগান। এই প্যাকটি সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। যদি সম্ভব না হয় অন্তত সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন।
চুলে প্রোটিন যোগায়:
এই প্যাকটি বানাতে আপনার লাগবে ২টা ডিম, ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, ১/২ কাপ টকদই।
এই পরিমাণটি লম্বা চুলের জন্য। উপকরণগুলো খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত খুব ভালো করে এই প্যাকটি লাগান।
একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। কন্ডিশনার দিতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করুন। ফলাফল দেখে আপনি নিজেই চমকে যাবেন।