টুন-টুনি ও অর্ধেক ডিমের গল্প।
টুন ও টুনি দুই ভাই-বোন। দুজনের খুব ভাব।
একজন যা করে, অন্যজনও তাই করে। যেখানে যায়, দুজনই একসঙ্গে যায়। যা খায়, দুজনই ভাগ করে খায়।
বাবা-মা তাদের একসঙ্গে টুনটুনি বলে ডাকে। তাদের ছিল একটি মুরগি।
মুরগিটি প্রতিদিন একটি করে ডিম পাড়ত। মা তাদের দুজনকে ভাগ করে দিত ডিমটি।
সিদ্ধ কিংবা ভাজা, প্রতিদিন অর্ধেক করে ডিম খেয়ে তারা খুশি ছিল। একদিন তাদের মধ্যে একটু ঝগড়া হলো। তারা মনে মনে একজন আরেক জনকে হিংসা করতে শুরু করল।
অর্ধেক ডিম খেয়ে তারা আর খুশি হতে চাইল না। মনে মনে তারা দুজনেই একটি আস্ত ডিম খেতে চাইল।
তাদের অখুশি খেয়াল করল মা। কিন্তু মা ছিল অসহায়। কিছুই করার ছিল না তার।
একদিন সকালে খাওয়ার সময় টুন বলল- আমি অর্ধেক ডিম খাব না।
টুনিও একই কথা বলল- আমিও অর্ধেক ডিম খাব না।
একজনকে একটা দিলে আরেক জনকেও একটা দিতে হবে।
ডিম একটা। আবার ডিম না দিলে কেউ ভাতও খাবে না।
খুব ঝামেলায় পড়ে গেল মা। সমাধান খুঁজে না পেয়ে ওদের বাবাকে ডাকল। সব শুনে একটু চিন্তায় পড়ে গেল বাবাও।
সে টুনটুনিকে কাছে ডাকল। দুজনকে দুই কাঁধে তুলে নিয়ে বাইরে গেল। অনেক দিন পর বাবার কাঁধে চড়তে পেরে বেশ খুশি খুশি লাগল তাদের।
টুন বলল, বাবা আজকে আমাদের নদীর ধারে নিয়ে যাবে?
টুনিও সুর মেলাল তাই চলো, বাবা। অনেকদিন আমরা একসঙ্গে নদীর ধারে যাই না।
ওরা একই ইচ্ছা প্রকাশ করায় খুশি হলো বাবা। বলল- ঠিক আছে চলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর বাবা কেমন হাঁপাচ্ছে মনে হলো। টুনি বলল- ভাই, বাবার কষ্ট হচ্ছে। চলো আমরা নেমে পায়ে হেঁটে যাই।
টুন বলল- ঠিক আছে। পথের দুধারের ঘাসফুল, ফড়িং এসব দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে।
নদীর ধারে পৌঁছে তারা দুজনই আনন্দে নেচে উঠল। বেশ কিছুক্ষণ খেলা করার পর টুন বলল- বাবা, বড্ড খিদে পেয়েছে।
টুনিও একই কথা বলল। বাবা হেসে বলল- খিদে পেলে তো বাড়ি ফিরে যেতে হবে। এখানে তো খাওয়ার কিছু নেই, টুনটুনি।
তারা বাড়িতে ফিরে এসে ভাত খেতে বসল। মা বলল- তোমরা কি অর্ধেক ডিম খাবে?
বাবা বলল- টুন-টুনি, তোমরা দুজনই আমাদের খুব আদরের। তোমাদের দুজনেরই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া দরকার।
কিন্তু আমরা খুব গরিব। আমাদের একটি মাত্র মুরগি। আমার ক্ষমতা থাকলে এখনই আরেকটি মুরগি কিনে আনতাম।
আমার খুব খারাপ লাগছে, আমি তা পারছি না।
তোমরা কি আগের মতো অর্ধেক করে ডিম খেতে শুরু করতে পারবে? আমরা চেষ্টা করবো, আগামীতে তোমাদের জন্য আরেকটি মুরগির ব্যবস্থা করার।
টুন ও টুনি একে অন্যের দিকে তাকাল। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই দুজনই অর্ধেক ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে খেলতে গেল।
তারা জানে, বাবা যে আরেকটি মুরগির কথা বলেছে, সেটা সহজে হবে না। বাবার সে ক্ষমতা নেই। তারা খেয়াল করল বাবা-মা কী যেন আলাপ করছে আস্তে আস্তে।
বাবা-মাকে চিন্তিত দেখে খেলায় মন বসতে চাইল না তাদেরও। হঠাৎ টুনির মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
টুনকে বলল কানে কানে। শুনে টুনের মুখও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারা দুজনই ছুটে গেল মা-বাবার কাছে। বাবা, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। টুনি বলল।
আমরা দুজনই একদিন কোনো ডিম খাব না। সেই ডিম রেখে দেবে মা। ওই ডিমটা রিপাদের বাড়িতে দিয়ে এলে ওদের মুরগি বাচ্চা ফুটিয়ে দেবে।
সেই বাচ্চাটি যদি মুরগি হয়, তাহলে আমাদের দুটো মুরগি হবে। দুটো করে ডিম পাড়বে। আমরা দুজনই তখন একটি করে ডিম খেতে পারব প্রতিদিন।
টুন বলল- তারপর আরেকদিন আমরা দুজনই ডিম খাব না। তাহলে দুটো ডিম বাঁচবে। সেই দুটো ডিম থেকে দুটো মুরগি পাওয়া যাবে। আমাদের চারটি মুরগি হবে। তারপর আমরা চারজনই একটি করে ডিম খেতে পারব। দারুণ মজা হবে না, মা!
ছেলেমেয়ের বুদ্ধি দেখে বাবা-মা অবাক হয়ে গেল। খুশিতে দুজনকে বুকে জড়িয়ে আদর করল তারা। হাসতে হাসতে হঠাৎ বাবা বলল, কিন্তু সবগুলো ডিমের বাচ্চা যদি মোরগ হয়?
তাহলে সেই মোরগ বাজারে বিক্রি করে মুরগি নিয়ে আসবে তুমি। তখন এই কথা শুনে সবাই একসঙ্গে হা হা করে হেসে উঠল।