জোয়ার ভাটা কাকে বলে? জোয়ার ভাটা কত প্রকার ও কি কি?
জোয়ার ভাটা কাকে বলে?
পৃথিবীর বাইরের মহাকর্ষীয় শক্তির (বিশেষ করে চাঁদের) প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের জল নিয়মিত বিরতিতে ফুলে ওঠাকে জোয়ার ও নেমে যাওয়ার ঘটনাকে ভাটা বলে। এই দুইয়ের একত্রে জোয়ার-ভাটা (Tide) বলা হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠে একই স্থানে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দুইবার ভাটা হয়।
অন্যভাবে বললে বলা যায়, চন্দ্র ও সূর্য ভূ-পৃষ্ঠের জল ও স্থলভাগকে আকর্ষণ করে যার ফলে ভূ-পৃষ্ঠের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যহ এক স্থানে ওঠে এবং অন্যস্থানে নেমে যায়, একেই জোয়ার ভাটা (Tide) বলে।
জোয়ার ভাটা কত প্রকার ও কি কি?
জোয়ার ভাটা প্রধানত চার প্রকার। যথাঃ
১. মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার
২. গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার
৩. তেজ কটাল বা ভরা কটাল
৪. মরা কটাল বা মরা জোয়ার
মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার:
চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে আবর্তনকালে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের নিকটবর্তী হয়, সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ সর্বাপেক্ষা বেশি হয়। এ আকর্ষণে চারদিক হতে জলরাশি এসে চন্দ্রের দিকে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার সৃষ্টি হয়। এই সৃষ্ট জোয়ারকে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলা হয়।
গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার:
চন্দ্র পৃথিবীর যে পার্শ্বে আকর্ষণ করে তার বিপরীত দিকের জলরাশির ওপর মহাকর্ষণ শক্তির প্রভাব কমে যায় এবং কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। এতে চারদিক হতে পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এভাবে চন্দ্রের বিপরীত দিকে যে জোয়ার হয় তাকে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।
তেজ কটাল বা ভরা কটাল:
অমাবস্যা তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য পৃথিবীর একই পার্শ্বে এবং পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীর এক পার্শ্বে চন্দ্র ও অপর পার্শ্বে সূর্য অবস্থান করে। ফলে এ দুই তিথিতে চন্দ্র ও সূর্য সমসূত্রে থাকে এবং উভয়ের মিলিত আকর্ষণে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে তেজ কটাল বা ভরা কটাল বলে।
মরা কটাল বা মরা জোয়ার:
কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে পরস্পর সমকোণে থাকলে চাঁদের আকর্ষণে যেদিকে জলরাশি ফুলে ওঠে ঠিক তার সমকোণে সূর্যের আকর্ষণেও সমুদ্রের জল ফুলে ওঠে। চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পর বিপরীতে কাজ করায় সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশি বিশেষ ফুলে ওঠে না, এইভাবে সৃষ্ট জোয়ারকে মরা কটাল বা মরা জোয়ার বলে।