জাফরান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, ত্বকের জন্য ভালো ও হার্ট সুস্থ্য রাখে।
স্যাফরন অথবা জাফরান আমরা কম বেশি সকলেই চিনি। যে কোনো খাবারে জাফরান ব্যবহার করলে, সেই খাবারের স্বাদ এবং রং অনেক বেড়ে যায়।
কেশর বা জাফরান শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ এবং রং-ই বাড়ায় না। এর আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে।
কিন্তু এটি এতোটাই ব্যয়বহুল যে সবার পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু অল্প পরিমাণ জাফরান ব্যবহার করেই এর উপকারিতা পাওয়া যায় তাই সেই দিক চিন্তা করলে অনেকটাই সাশ্রয়ী।
জাফরান হল বিশ্বের সর্বাধিক ব্যয়বহুল মশলা। জাফরান (ইংরেজি: saffron, Autumn crocus), (বৈজ্ঞানিক নাম: Crocus sativus) হচ্ছে Crocus গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতি।
এদের বেশির ভাগ ভারতে কাশ্মীরে জন্মায়। এবং এটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল।
জাফরান কী?
ক্রোকাস স্যাটিভা নামক উদ্ভিদের ফুলের stigmas শুকিয়ে জাফরান তৈরি হয়।
মূলত ইরান, ভারত এবং গ্রিসের কিছু জায়গায় এর উৎপাদন হয়। অনেকে মনে করেন জাফরানের আদিভূমি হল ইরান।
আবার অনেক ঐতিহাসিকদের মতে, স্পেন হল জাফরানের আদিভূমি। জাফরান উৎপাদনে ভারত সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
আগে কেবলমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরে চাষ হত, এখন হিমাচল প্রদেশেও চাষ করা হয়। অগাস্ট মাসে এর চারা রোপন করা হয় এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফুল তোলা হয়।
১ কেজি জাফরান মশলা তৈরি করতে ১৫,০০০-১৬,০০০ ফুল লাগে অর্থাৎ ১ গ্রাম শুকনো জাফরান প্রস্তুত করতে প্রায় ১৫০-১৬০টি ফুল প্রয়োজন হয়। জাফরানকে “রেড গোল্ড”ও বলা হয়।
১ কেজি জাফরান তৈরি করতে সময় লাগে ৩৭০–৪৭০ ঘন্টা। এই জন্যই জাফরান এতো ব্যয়বহুল।
জাফরানের উপকারিতা
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, জাফরানের উপকারিতা সম্পর্কে-
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর:
জাফরানে একটি চিত্তাকর্ষক উদ্ভিদ যৌগ রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস হিসাবে কাজ করে। ক্রোকিন এবং ক্রোসটিন হল জাফরানে থাকা ক্যারোটিনয়েড যা জাফরানের লাল রঙের জন্য দায়ী।
এই যৌগ মস্তিষ্কের কোষগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, প্রদাহকে উন্নত করতে পারে, ক্ষুধা এবং ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে জাফরান। এর মধ্যে একধরণের ক্যারোটিন থাকে যাকে ক্রোসিন বলা হয়।
এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার কোষ, যেমন লিউকোমিয়া, ওভারিয়ান কারসিনোমা, কোলন অ্যাডনোকারসিনোমা ইত্যাদি ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
টেস্ট-টিউব স্টাডিতে, জাফরান কোলন ক্যান্সারের কোষগুলিকে হত্যা করে বা তাদের বৃদ্ধি কমাতে পারে। ত্বক, প্রোস্টেট, ফুসফুস, স্তন, জরায়ু এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ক্রোসিন জাফরানের প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষকে কেমোথেরাপির ওষুধের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
ওজন হ্রাস করতে পারে:
গবেষণা অনুসারে, জাফরান আপনার ক্ষুধা রোধে সহায়তা করতে পারে। আট সপ্তাহের এক সমীক্ষায়, জাফরান পরিপূরক গ্রহণকারী মহিলাদের উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হ্রাস পেয়েছে।
তবে, কীভাবে জাফরান ক্ষুধা নিবারণ করে এবং ওজন হ্রাসকে সহায়তা করে তা বিজ্ঞানীরা অনিশ্চিত।
ব্যথা কমায়:
জাফরানের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া শারীরিক দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এটি দারুণ কাজে লাগে।
অনিদ্রা দূর করে:
অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। সেক্ষেত্রে জাফরান ব্যবহার করতে পারেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একগ্লাস গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে খান, দেখবেন ঘুম ভালো হবে।
মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে:
জাফরান আলজাইমার এবং পার্কিনসন রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে রক্ষা করে।
জাফরান মস্তিষ্ককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে সেই সাথে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা মুক্ত রাখে।
হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে:
জাফরান থায়ামিন এবং রাইবোফ্লাভিনে সমৃদ্ধ যা হার্ট সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়া জাফরান থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্যকর ধমনী এবং রক্তনালীগুলি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
এই মশলায় থাকা ক্রোসটিন রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এথেরোস্ক্লেরোসিসের তীব্রতা হ্রাস করে।
ত্বকের জন্য ভালো:
সুন্দর ত্বক পেতে নিয়মিত জাফরান ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে, গায়ের রং পরিষ্কার করে তুলতে সাহায্য করে।
তবে এর মাত্রারিক্ত ব্যবহার ত্বকের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতা পারে।
বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি:
মাসিক নিয়মিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জাফরান। এক্ষেত্রে এক চিমটি গুঁড়ো জাফরান এক টেবিল চামচ দুধে মিশিয়ে খেলে হরমোন সচল হয় এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়।
২০-৪৫ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে, প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান গ্রহণ করা ঋতুস্রাবের উপসর্গ কমাতে বেশি কার্যকর ছিল।
খাবার মুখরোচক করে:
খাবারকে সুগন্ধী ও মুখরোচক করতে জাফরানের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া খাবার আকর্ষণীয় ও রঙিন করার কাজটিও করে জাফরান। জাফরানের ঝলমলে রং মানুষকে খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে।
মেজাজ উন্নত করতে পারে:
জাফরানের ডাক নাম দেওয়া হয়েছে “রৌদ্রের মশলা”। এটি আপনার মেজাজ উজ্জ্বল করতে সহায়তা করতে পারে।
পাঁচটি সমীক্ষার একটি পর্যালোচনাতে, হালকা থেকে মাঝারি ডিপ্রেশন এর লক্ষণগুলি চিকিৎসায় জাফরান উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর ছিল।
সতর্কতা:
অনেক গুণসম্পন্ন এ জাফরান অতিমাত্রায় খাওয়া যাবে না। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
নারীদের ক্ষেত্রে অন্তঃস্বত্বা অবস্থায় এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।