চুলের যত্নে মেহেদি পাতার ব্যবহার।
আগেকার দিনে তো এতো বিউটি প্রডাক্ট ছিল না। তাই সবাই প্রাকৃতিক উপকরণের প্রতি বেশি নির্ভরশী ছিল। এই সব উপকরণের মধ্যে অন্যতম মেহেদী পাতা।
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি এবং চুল পড়া রোধে মেহেদি পাতার জুড়ি নেই। মেহেদি দিলে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুলের রুক্ষতা দূর হয়, চুল পড়া কমে, ঝলমলে হয় এবং নতুন চুল গজানো থেকে শুরু করে চুলের নানা সমস্যা দূর করে মেহেদি।
মেহেদি পাতা খুব সহজে পাওয়া যায়, যেমন শহর এলাকার বাজারে সব সময় কাঁচা মেহেদি পাতা পাওয়া য়ায় এবং এর ব্যবহারও সহজ।
মেহেদি পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে রেখে দিলে যেকোন সময় ব্যবহার করা যায়, তবে শুকনো পাতার থেকে তাজা পাতা বেশী উপকারী।
প্রাকৃতিকভাবে সাদা চুল রং করার ক্ষেত্রে মেহেদি পাতার তুলনা নেই। এমনকি কালো চুলে ব্যবহারে চুল আরও কালো হয়।
আসুন জেনে নিই চুলে মেহেদি পাতা ব্যবহারের উপকারিতা-
চুল বৃদ্ধি করে:
মেহেদী পাতা ব্যবহারে খুব সহজেই পেতে পারেন স্বাস্থ্যোউজ্জ্বল ঘন কালো চুল।
১ কাপ পরিমাণ মেহেদী পাতা বাটা, ২ চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। এরপর শুধু পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। পরের দিন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মাসে মাত্র ২ বার ব্যবহার করুন চুলে মেহেদী পাতা। দেখবেন চুল অনেক ঘন এবং কালো হয়ে গিয়েছে।
চুলের রুক্ষতা দূর করে:
মেহেদী চুলের জন্য কন্ডিশনারের কাজ করে চুলের রুক্ষতা এবং চুলের আগা ফাটা রোধ করে।
১ কাপ মেহেদী পাতা বাটার সাথে ২/৩ চামচ অলিভ অয়েল এবং ১ টি ভিটামিন “ই” ট্যাবলেট মিশিয়ে নিয়ে চুলে লাগান। ১ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা এবং আগা ফাটা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
চুলকে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে:
৩ চামচ মেহেদি বাটার সাথে ১ চামচ মেথি পেস্ট এবং ২ চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
মেথিতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর লেসিথিন চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
নারকেল তেলের মনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড চুলের সাথে প্রোটিনের বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলে আর চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করে তোলে আরও উজ্জ্বল আর প্রাণবন্ত।
চুলের অকালপক্বতা রোধ করে:
২ চামচ মেহেদি পাতা পেস্ট, একটি জবা ফুল বাটা, ২ চামচ লেবুর রস এবং ২ চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
জবা চুল পড়া কমিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, আর সেই সাথে চুলের অকালপক্বতা রোধ করতে সাহায্য করে।
লেবুর রস খুশকি দূর করে চুলকে মসৃণ করে তোলে। নারকেল তেল চুলকে যাবতীয় তাপ, ধুলোবালি, কেমিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
চুল রঙ করতে:
যারা মার্কেট থেকে কেনা হেয়ার কালার দিয়ে চুল রাঙাতে ভয় পাচ্ছেন, তারা কিন্তু অনায়াসেই মেহেদি আর কফির গুঁড়ো মিক্স করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে চুল রাঙাতে পারেন।
মেহেদি বাটার সাথে ১-২ চামচ কফির গুঁড়ো মিশিয়ে পুরো মাথায় আগাগোড়া লাগিয়ে ঘণ্টা দুয়েক পর ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে হালকা লালচে বাদামী রঙে চুল রাঙানো হয়ে যাবে।
চুলকে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল করে:
দুই টেবিল চামচ মেহেদি বাটা, একটা পাকা কলা সামান্য পানির সাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিন।
এবার গোসলের সময় আপনার রেগুলার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনারের পরিবর্তে এই প্যাকটিই পুরো মাথায় আগাগোড়া লাগিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
কলা প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ ন্যাচারাল কন্ডিশনার। এই প্যাকটি ব্যবহার করলে সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করলে চুল হয়ে উঠবে আর বেশি হেলদি, শাইনি আর ম্যানেজেবল।
মেহেদি দেয়ার আগের দিন চুলে তেল দেয়া ভালো। চুলে বাজারের কোনো ক্যামিকেল রং ব্যাবহার করে থাকলে তবে কম করে হলেও ২ থেকে ৩ মাস পর মেহেদি পাতা ব্যবহার করা উচিত, নাহলে চুলের ক্ষতি হতে পারে।