চুলের যত্নে পেঁয়াজ।
কথায় আছে নারীর সৌন্দর্য চুলে এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল নারীর অহংকারের অন্যতম বিষয়। তবে আজকাল প্রচলিত এই কথা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে নারীরা বিভিন্ন হেয়ারকাট, স্ট্রেটনিং, কার্লিং, কালার ব্যবহার করে চুলকে অস্থায়ী ভাবে ভিন্নরূপ দেয়।
কিন্তু এতে কী হবে, এতে চুল তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে পড়ে। ফলে শুরু হয় চুল পড়া, আগাফাটা, খুশকি, চুলের গোড়া আলগা হওয়া ইত্যাদি। আর এথেকেই ঘিরে ধরে দুশ্চিন্তা ও হতাশা। কিন্তু হতাশা কোনো সমাধান না।
তাই সমাধানের জন্য ব্যবহার করা যায় এমন বহু টিপস রয়েছে। তার মধ্যে এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো রোজকার জীবনে আমরা ব্যবহার করে থেকি। তার মধ্যেই একটি হল পেঁয়াজ।
প্রাকৃতিক ভাবে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে পেঁয়াজ অনন্য। কারণ পেঁয়াজ ত্বক ও চুলের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান তা ত্বক ও চুলকে রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। পেঁয়াজে ভিটামিন, মিনারেল, সালফার, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
তাছাড়া সালফার নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুল পড়া বন্ধ করে এবং অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, চুলের যত্নে পেঁয়াজকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়-
পেঁয়াজের রস ও মধু:
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর চুল পেতে পেঁয়াজের রসের জুড়ি মেলা ভার আর এর সঙ্গে যদি যোগ করা মধু তাহলে এর কার্যকারিতা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই সেক্ষেত্রে, ২ চা চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান।
২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের জৌলুস বাড়াবে। সেই সাথে চুলের বৃদ্ধিও দ্রুত করবে।
পেঁয়াজের রস ও ক্যাস্টর অয়েল:
নতুন চুল গজাতে পেঁয়াজের রস ও ক্যাস্টর অয়েল খুবই কার্যকরী। ক্যাস্টর অয়েল মাথার ত্বক মসৃণ রাখে। এতে আছে রাইসিনোলিয়েক অ্যাসিড এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা মাথায় ঠিক মতো মালিশ করা হলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। সমপরিমাণ পেঁয়াজের রস ও ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
তারপর এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি নতুন চুল গজাতে ভীষণ কার্যকর।
পেঁয়াজের রস ও লেবু:
পেঁয়াজের রস কিন্তু খুশকি দূর করতেও ভীষণ কার্যকরী। সেক্ষেত্রে, ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ পাতিলেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করতে হবে। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে বা শুধু জলে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
এভাবে সপ্তাহে নিয়মিত ৩ থেকে ৪ বার ব্যবহার করলে খুশকিতো দূর হবেই। সেই সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
পেঁয়াজের রস ও শ্যাম্পু:
স্নানের সময় পরিমাণমতো শ্যাম্পু একটি বাটিতে নিয়ে তাতে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে শ্যাম্পু করতে হবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়ম মেনে জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই পদ্ধতি নিয়মিত করলে চুল আকর্ষণীয় ও সুন্দর হয়ে উঠবে।
পেঁয়াজের রস ও কারিপাতা:
কারিপাতা চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে, অকালপক্বতা কমায় এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। তাই তো পেঁয়াজ এবং কারিপাতা একসঙ্গে স্কাল্পে লাগালে দারুন উপকার মেলে। এক্ষেত্রে কারিপাতা তাজা অবস্থায় বেঁটে নিন।
এরপর দুই টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস কারিপাতা বাঁটার মধ্যে দিন। মিশ্রণটি চুলে এবং স্কাল্পে লাগাল। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস ও অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েলের সঙ্গে ৩ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রস মেশান। এবার মিশ্রনটি হাতে নিয়ে গোলাকার পদ্ধতিতে চুলের গোঁড়ায় এবং স্কাল্পে লাগিয়ে নিন। দু’ঘণ্টা রেখে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রসঙ্গত, চুলের শক্তি বৃদ্ধিতে এবং খুশকি কমাতে ও এই প্যাকটির জুড়ি মেলা ভার।