চিকেন পক্স হলে আমাদের কি করণীয়?

গরমের শুরুতে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী-মার্চ এই সময়টায় চিকেন পক্স এর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। আগে এই রোগ হলে অনেক মানুষ মারা যেত। বসন্তরোগ বা জলবসন্ত বা চিকেনপক্স অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি ভাইরাস বাহিত একটি রোগ। চিকেন পক্স আক্ৰান্ত ব্যাক্তি থেকে দ্রুত অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। “Varicella” নামক ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১৪ থেকে ২১ দিন পর ধীরে ধীরে পক্সের উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।

কীভাবে বুঝবেন চিকেন পক্স হয়েছে?

চিকেন পক্স হলে সারা শরীরে ছোট ছোট লালচে ফোস্কার মতো দেখা যায়। সেই সঙ্গে তীব্র মাথা ব্যথা এবং জ্বর হয়। ফলে রোগীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। চিকেন পক্স হলে শরীরে মারাত্মক চুলকায়। এতে ত্বকের লালচে ফোসকা ফেটে গিয়ে আরও ফুসকুড়ির মতো উঠতে শুরু করে। সাধারণত চিকেন পক্স হলে কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যায়।

এবার জেনে নেওয়া যাক, চিকেন পক্স হলে কি খেতে হবে ও আমাদের কি কি বিষয় মেনে চলতে হবে-

স্বাস্থ্যকর খাদ্য:

চিকেন পক্স বা বসন্ত রোগে আমাদের স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অবশ্যই ঘরে রান্না করা খাবার খেতে হবে। এছাড়া তাজা ফল, সবুজ শাক সবজি, দই, প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত বা জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন।

চুলকানো যাবে না:

সারা শরীরে ফুসকুড়ি এবং ফোসকা হওয়ার কারণে আপনার খারাপ লাগতে পারে বা চুলকাতে ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু চুলকাবেন না চুলকানোর ফলে বেরে যেতে পারে ও ব্যথা হতে পারে। চুলকানি কমাতে নারকেল তেল প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া পাতলা কাপড় পরে থাকতে পারেন।

নিম পাতা:

নিম পাতা এমনিতেই জীবাণুনাশক। নিম পাতাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিম্যালারিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে যা চিকেন পক্স নিরাময়ে সাহায্য করে। স্নানের সময় পানিতে নিম পাতা ফেলে স্নান করলে ভালো হয়।

বসন্ত রোগে রোগীকে নিমপাতার বিছানায় শোয়ালে জীবাণুনাশক হিসেবে ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে বসন্তের গুটিতে দিলে গুটি দ্রুত শুকিয়ে যায়। এছাড়া নিমপাতা খেলেও ভালো কাজ হয়।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম:

চিকেনপক্স সংক্রামক খুব দ্রুত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের চিকেনপক্স হয়নি বা চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন নেই। এসময় আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন। ফোস্কা পুরোপুরি শুকানো না হওয়া পর্যন্ত যথাযথ বিশ্রাম জরুরি।

আলাদা থাকুন:

পরিবারের অন্যান্য লোকেদের থেকে আলাদা থাকুন। কারণ এটি খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ, হাঁচি-কাশি এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমেই এটি বেশি ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে আলাদা একটি ঘরে থাকা উচিত। ব্যবহৃত পোশাক, গামছা এগুলো যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। পক্স ভালো হয়ে গেলে ব্যবহৃত সব কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে গরম পানি এবং স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে দিন।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরতে হবে:

এই সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরী। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘর, বিছানা, ব্যবহৃত জামা কাপড়, তোয়ালে ইত্যাদি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে করে ইনফেকশনের ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমে যাবে।

ডিহাইড্রেশন এড়িয়ে চলতে হবে:

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য প্রচুর পরিমাণে তরল বা পানি পান করা জরুরি। দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করাবেন। এক্ষেত্রে তাজা ফলের রস, ডাবের পানি, স্যুপ এবং প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে পারেন। দারুচিনি এবং ভেষজ চা পান করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলুন।

চর্বি যুক্ত মাংস ও ফুল-ফ্যাট দুধ:

চর্বি যুক্ত মাংস ও ফুল-ফ্যাট দুধ (স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার) এড়িয়ে চলাই ভালো। এসব খাবারে থাকা ফ্যাট ভ্যারিসেলা ভাইরাসের সংক্রমণের গতিকে বাড়িয়ে দেয়। তাই এসময় এ ধরণের চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।

যেসব খাবার খাওয়া যাবে না:

ঝাল খাবার, লাল মরিচ, সস, রসুন, অ্যাসিডিক খাবার, আঙ্গুর, আনারস, টমেটো, সাইট্রাস ফল, ভিনেগার মধ্যে আচারযুক্ত খাবার, কফি, নোনতা খাবার, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত তে লমশলা দিয়ে রান্না করা খাবার, চকোলেট, বাদাম বা বীজ জাতীয় যে কোনও খাবার ইত্যাদি এসময় এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, এই সব খাবার চিকেন পক্সের সংক্রমণের গতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

নিয়ম মেনে গোসল করতে হবে:

ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা যাবে না। হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি নিম পাতা সিদ্ধ পানিতে গোসল করতে পারেন। সাবান পানি দিয়ে ফোস্কা ধুতে পারবেন। তবে ভুলেও গা ঘষা যাবে না।

গোসল শেষে তোয়ালে বেশি চেপে গা মোছা যাবে না। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবেই শরীর শুকিয়ে নিতে হবে।

রেফারেন্স: