গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে কোন কোন খাবার গুলো।

গরমে আমরা শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য কত কিনা খাই। যেমনঃ আইসক্রিম, কোল্ডড্রিংকস, কোল্ড কফি ইত্যাদি।

কিন্তু এগুলো ছাড়া আরও অনেক খাবার আছে যে গুলো শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং করে তোলে তরতাজা ও প্রাণবন্ত।

শরীরকে ঠান্ডা রাখতে বোতলজাত বা প্যাকেটজাত খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখে সে রকম কয়েকটি খাবার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

শসা বা ক্ষীরা:

Cucumber
শসায় রয়েছে ৯৫ শতাংশ পানি। এই গরমে শসা বা ক্ষীরার সালাদ রাখুন প্রতিবেলায়। সালাদের পাশাপাশি এটা আপনি হালকা একটু লবণ মাখিয়ে খেতে পারেন।

এছাড়া জুস ও তৈরি করে খেতে পারেন। শসা বা ক্ষীরা আপনার শরীরকে সতেজ রাখবে এবং তৃষ্ণাও মেটা।

ডাবের পানি:

Coconut water
এই গরমে ডাবের পানি নাম শুনলে গলা যেন আরও শুকিয়ে যায়। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের সহজলভ্য এই পানীয় মানুষ প্রায়শ গ্রহণ করে থাকে।

অতিরিক্ত গরমে, অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরে, খেলাধুলা বা ব্যায়ামের পরে শীতলতার পরশ বুলিয়ে দেহ ও মন শান্তিতে ভরিয়ে তোলে।

শারীরিক ও মানসিক বেদনা উপশমকারী এই পানীয়টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে পুনরায় কর্মক্ষম করে তোলে।

শরবত:

Sherbet
লেবুর শরবত, অ্যালোভেরা শরবত বা যে কোন ফলের জুস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গরমে যে পরিমাণ ঘাম বের হয়ে যায় তা পূরণের জন্য লেবুর শরবত কার্যকরী।

লেবুতে থাকে প্রচুর ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম, যা দেহকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ত্বক মৃসণ রাখে।

এছাড়া ইসবগুলের ভুসির শরবত খুবই শীতল। তাই গরমে এটি খাওয়া খুব জরুরি। ফলের জুসে বিভিন্ন উপাদান থাকে যা শরীরের যে কোন ঘাটতি পূরণ করে।

ঠান্ডা পানি:

Cold water
প্রচন্ড গরমে শরীরে সব থেকে আগে যেটা দরকার সেটা হল পানি। ঘামে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়।

তাই পানির চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রচুর পানি খান। পানি ফ্রিজে রেখে একটু ঠান্ডা করে খেতে পারেন।

তোকমা:

Tokma
তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে।

এছাড়া তোকমা ঘর্মগ্রন্থিকে সচল রাখে। যাদের মূত্রনালির সমস্যা আছে তারা নিয়মিত তোকমা ভিজিয়ে খেলে মূত্রনালির সমস্যা দূর হয়ে যায়।

তরমুজ:

Watermelon
তরমুজ ছাড়া গরমটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তরমুজের মধ্যে ৯০ শতাংশই পানি থাকায় আপনার শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে।

বাজার থেকে তরমুজ কিনে সরাসরি না খেয়ে ফ্রিজে রেখে খেতে পারি। ফ্রিজে রাখা একফালি ঠান্ডা তরমুজের টুকরা প্রচন্ড গরমে শীতলতার পরশ বুলিয়ে দেবে।

এটা পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি আপনাকে তরতাজা করে তুলবে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া তরমুজ জুস করে খেতে পারেন।

কলা:

Banana
খুবই স্বাস্থ্যকর একটি খাবার কলা। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলা কমবেশি সবারই থাকে, তা কাঁচা আর পাকা হোক। উপাদেয় সস্তা সারা বছর মেলে কলা।

কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম। ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’র গুরুত্বপূর্ণ উৎস কলা। কলা পাকা বা কাঁচা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়।

অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে যে তরল বের হয়ে যায়, এই ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে পটাশিয়াম। গরমের সময় কলা খেতে পারেন।

তাছাড়া কলা আপনার শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করবে।

টমেটো:

Tomatoes
টমেটোতে রয়েছ শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ ভাগ পানি। এ ছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’, লাইকোপেন, ক্যারোটিন, রিবোফ্লোবিন, ক্যালসিয়াম ও লোহা থাকে।

টমেটোর জুস কিংবা সালাদ খুবই সুস্বাদু। এ ছাড়া রান্নার পরও টমেটোর পুষ্টিগুণ কমে না। তাই গরমের সময় টমেটোর স্যুপ কিংবা ঝোল রান্না করে খেতে পারেন।

পুদিনাপাতা:

Mint leaves
ঠান্ডা ও প্রশান্তির জন্য পুদিনাপাতা ভালো খাবার। গরম কমাতে অনায়াসে নানাভাবে পুদিনাপাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।

পুদিনা পাতা, লেবু, বিট লবণ, চিনি, গোলমরিচ, বরফ কুচি দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন।

লাল মরিচ:

Red pepper
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লুক লাবোর্ড বলেন, ঝালযুক্ত খাবার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে বেশি ঘাম সৃষ্টি করে।

ঘাম শুকালে তখন শরীর ঠান্ডা হয়। লাল মরিচে যে ক্যাপসিসিন থাকে, তা শরীরের তাপমাত্রা না বাড়িয়ে বেশি ঘাম সৃষ্টি করে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন লাল মরিচ খেলে মৃত্যুর হার হ্রাস করে। হার্টের রোগ ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও ১৩ শতাংশ কমে যায়।

যাঁরা নিয়মিত লাল মরিচ খান, তাঁদের কোলেস্টেরল কম থাকে।

পেঁয়াজ:

Onion
গরমে পেঁয়াজ, বিশেষ করে লাল পেঁয়াজ দারুণ উপকারী। কোয়ারসেটিন নামের এক রাসায়নিক উপাদান আছে এতে, যার অ্যান্টিহিস্টামিন প্রভাব রয়েছে।

গরমে হিট র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। পেঁয়াজ এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ফাইটোকেমিক্যালস নামের একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে পেঁয়াজে, যা শরীরে ভিটামিন ‘সি’র কার্যকারিতা বাড়ায়।

এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। পেঁয়াজে ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘ই’র মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর। এতে ত্বক সুস্থ্য থাকে।

ত্বক ভালো রাখতে বেশি করে খাবারে পেঁয়াজ রাখা উচিত।

সবুজ শাকসবজি:

Green vegetables

এই ধরনের খাবারে ফাইবার এবং পানি মাত্রা খুব বেশি পরিমাণে থাকে। তাই প্রত্যেকবার খাবারের সঙ্গে অল্প করে সবজি খেলে শরীরে জল মাত্রা কমে যাওয়ার আশংকা কমে।

সেই সঙ্গে শরীরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। যেমনঃ লাউ, করলা, কাঁচা পেঁপে, পটল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা ইত্যাদি।

গরমে স্বস্তি পেতে অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার ও প্রসেসড ড্রিংকস না খেয়ে প্রাকৃতিক এই খাবার গুলো খান এবং গরমে সুস্থ্য থাকুন।