গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবার প্রাকৃতিক উপায়।
গ্রীষ্ম মানে গরম। আর গরম মানে ঘাম আর সাথে ঘামাচি। তবে হ্যাঁ ঘামাচি সবার হয় না।
দেহের ঘামের বা ঘর্ম গ্রন্থি গুলোর মুখ যখন ময়লা ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য আটকে যায়, তখন ঘাম বের হতে না পেরে সেখানে তৈরি হয় ঘামাচি।
ঘামাচি শরীরের যে কোনো জায়গায় হতে পারে। এটা দেখতে বিচ্ছিরিই নয় এবং সাথে যুক্ত হয় চুলকানি, পাশাপাশি দেখা দেয় নানা রকম সংক্রমণ।
বিরক্তিকর ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই নামি-দামী পাউডার ব্যবহার করে থাকেন।
অনেকের ঘামাচি এত বেশি হয় যে, বাধ্য হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্নও হয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে প্রাকৃতিক উপায়ও রয়েছে।
গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবার প্রাকৃতিক উপায়
নিচে গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবার প্রাকৃতিক উপায় দেওয়া হলো –
কাঁচা আম:
প্রাকৃতিক উপায়ে ঘামাচি দূর করতে চাইলে প্রথমেই আসে কাঁচা আমের কথা। কাঁচা আম ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করে এটা শুনে হয়তো আপনারা একটু অবাক হবেন। কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নাই। এটি সত্য।
গরমে আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে কাঁচা আম। পাশাপাশি ঘামাচি ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে। দুটি কাঁচা আম দুকাপ পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন যতক্ষন না পর্যন্ত আম গুলো নরম হয়।
এইবার সিদ্ধ হওয়া আম গুলো চেপে রস বের করুন। আমের রস ঠান্ডা পানিতে মিশান, সাথে লবণ এবং চিনি আপনার স্বাদ অনুযায়ী মিশিয়ে নিন।
দৈনিক এক বা দুই বার পান করুন এক সপ্তাহ পর্যন্ত যা আপনার ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করবে।
ঠাণ্ডা চিকিৎসা:
ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে ঠাণ্ডা বা শীতল পরশ খুব কাজে আসে। কিছু বরফ টুকরা নিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত এলাকায় ৫-১০ মিনিট ধরে লাগাতে পারেন।
দৈনিক ৪-৬ ঘন্টা পরপর এটি করতে পারেন। এইভাবে ২ থেকে ৩ দিন করুন। ঘামাচি সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং পুনরায় দেহে ছড়াবে না।
অন্যভাবে আপনি একটি পরিষ্কার কাপড় ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত এলাকায় ৫-১০ মিনিট ধরে লাগাতে পারেন।
এইভাবে দিনে ৩-৪ বার করুন এক সপ্তাহ পর্যন্ত। দেখবেন, খুব তাড়াতাড়ি ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবেন।
নিম পাতা:
আমি আগেই বলেছি, দেহের ঘামের বা ঘর্ম গ্রন্থি গুলোর মুখ যখন ময়লা ও ব্যাকটেরিয়ার জন্য আটকে যায়, তখন ঘাম বের হতে না পেরে সেখানে তৈরি হয় ঘামাচি। এক্ষেত্রে নিমপাতা খুবই কার্যকরী।
নিমপাতার এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ঘামাচির জীবাণু মেরে ফেলে দ্রুত আপনাকে ঘামাচি থেকে মুক্তি দেবে। নিমপাতা ভালোভাবে বেটে নিন।
খানিকটা পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং আক্রান্ত জায়গায় লাগান। সম্পূর্ণ না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ পর গোসল করে ফেলুন।
শসা:
শসা আমাদের শরীরকে ঠান্ডা করার পাশাপাশি ঘামাচির আক্রান্ত স্থানকেও ঠান্ডা এবং শীতল করতে সাহায্য করে। এটি ঘামাচির চুলকানি দূর করতেও সাহায্য করে। শসাকে পাতলা করে কেটে নিন।
এক বাটি ঠান্ডা পানিতে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তাতে কিছুক্ষন শসার টুকরো ভিজিয়ে নিন। এবার শসার টুকরো গুলোকে নিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে ১০মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন।
দিনে ৩ বার করুন এক সপ্তাহ পর্যন্ত। আপনি ইচ্ছে করলেই শসার নরম অংশ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করতে পারেন।
৩০ মিনিট পর পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার আক্রান্ত স্থানকে ঠান্ডা রাখবে এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করবে।
এবং প্রতিদিন শসা খাওয়ার চেষ্টা করুন যা আপনার দেহকে ডিহাইড্রেট হতে রক্ষা করবে।
অ্যালোভেরা জেল:
অ্যালোভেরাতে এন্টি- ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিসেপ্টিক প্রপার্টি আছে। তাই এটা লাগালে খুব সহজেই ঘামাচি সেরে যাবে। এর জন্য অ্যালোভেরা পাতা কেটে তার ভিতর থেকে জেল বের করে নিতে হবে।
তাপর জেল নিয়ে ঘামাচির ওপর লাগান। এক দুবার লাগানোর পরেই দেখবেন লাল ভাব কমে গেছে এবং জ্বালা বা চুলকানিরও অবসান ঘটছে।
বেসন:
ছোলার বেসন এবং পানি দিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এরপর ঠান্ডা ঘামাচির ওপর লাগান।
২০-২৫ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ঘরোয়া পদ্ধোতির সাহায্যে খুব সহজেই ঘামাচির জ্বালা এবং চুলকানির হাত থেকে রেহাই পাবেন।
লেবুর শরবত:
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ গ্লাস লেবুর শরবত পান করুন একটু বেশি করে লেবু মিশিয়ে। এটি ঘামাচি নিরাময়ে কাজ করবে জাদুর মতো।
গরমে সাদা পাতলা বা হালকা কাপড় -চোপড় পরিধান করুন এবং প্রচুর পানি পান করুন।
ঠান্ডা খাবার (যেমনঃ পেঁপে, তরমুজ, ডাবের পানি ইত্যাদি) খেয়ে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করুন।
চেষ্টা করুন শরীরে ঘাম হওয়ার পর শরীরকে পরিষ্কার করতে। তাহলে কিছুটা হলেও আমরা ঘামাচি থেকে দূরে থাকতে পারবো।