খালি পায়ে হাঁটলে শরীর ও মন ভালো থাকে, পেশী ও হাড় শক্ত হয় এবং রক্তচলাচলে উন্নতি ঘটে।

আধুনিক জীবন যেন আমাদের খালি পায়ে হাঁটা ভুলিয়ে দিয়েছে। হাঁটতে এক রকম জুতা দৌঁড়াতে গেলে আরেক রকম জুতা।

আমাদের যেন খালি পায়ে হাঁটতে ইচ্ছেই করে না। খালি পায়ে হাঁটলে পায়ে ময়লা লেগে যাবে। তাই সব সময় জুতা পরে থাকতে হবে। আরও কত কি।

যান্ত্রিক জীবনে মানুষের সঙ্গে মাটির সংযোগটা একেবারেই কমে গেছে। এক সময়ে দাদা দাদীরা বলতেন এতো জুতা পড়োনা একটু খালি পায়ে হাটো একটু পায়ে মাটি লাগাও।

খালি পায়ে হাঁটা মানে মাটির সাথে মিশে যাওয়া। মাটির ঠান্ডা পরশ যেন সারা শরীরটাকে শীতল করে রাখে।

জুতো-স্যান্ডেল খুলে সময় সুযোগ হলেই খালি পায়ে হাঁটুন। গবেষকেরা বলছেন, খালি পায়ে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। বালি, সবুজ ঘাস বা মাটির ওপর খালি পায়ে হাঁটলে শরীরের প্রদাহ অনেক কমে যায়।

চিকিৎসকেরা অনেক সময় খালি পায়ে হাঁটার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে ঘুম ভালো হবে এবং শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়বে। স্বাস্থ্য সুবিধা ছাড়াও খালি পায়ে হাঁটলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।

এখন মনে হয় দাদী, নানীরা একেবারে ঠিক ছিলেন। তারা বলতেন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে চাইলে ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা এটি একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, মানুষের স্বাস্থ্য আজ সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, কারণ তারা পরিবেশ এবং পৃথিবীর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে।

খালি পায়ে হাঁটার সুবিধা:

নিচে খালি পায়ে হাঁটার সুবিধা দেওয়া হলো –

অনিদ্রা রোধে সহায়তা করে:

অনিদ্রা রোধ করতে বা ঘুমের উন্নত ঘটাতে প্রতিদিন সকালে প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। এতে অনিদ্রা দূর হবে।

চিকিৎসকেরা তাই অনেক সময় খালি পায়ে হাঁটার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে ঘুম ভালো হবে এবং শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়বে।

শরীর ও মন ভালো থাকে:

শরীর ও মন ভালো রাখতে প্রতিদিন ভোরে উঠে খালি পায়ে হাঁটুন। ঘাসের উপর হাটতে পারেন কিংবা মাটিতে।

খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলে বা ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটলে দেহের উপকার হয় এবং শরীর ও মন দুটিই ভালো থাকে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে:

ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। দাদী, নানীরা বলতেন দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে চাইলে ঘাসের উপর খালি পায়ে হাঁটতে হবে।

এছাড়া চোখের স্বাস্থ্যের জন্য সবুজ রং খুব উপকারী। তাই চোখের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন সকালে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটা উচিত।

Barefoot sand

পা সুস্থ রাখে:

পায়ের জন্য খুব ভালো ব্যায়াম হচ্ছে খালি পায়ে হাঁটা। এর ফলে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়, পেশি মজবুত হয়, পায়ের রগ ও লিগামেন্ট, গোড়ালি ও পায়ের পাতার শক্তি বৃদ্ধি পায়।

খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটলে কোনো কোনো আঘাত নিরাময় হয়, হাঁটুর সমস্যা ভালো হয়, পিঠের সমস্যাও ভালো হয়ে যায়।

স্ট্রেস দূর করে:

স্ট্রেস দূর করতে ভোরবেলা খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটুন। সকালে ফ্রেশ অক্সিজেন, শান্ত পরিবেশ, পাখির কোলাহল আমাদের মন ভালো দেয়। তাই প্রতিদিন ভোরে উঠে অন্তত ৩০ হাঁটার চেষ্টা করুন।

হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ে:

প্রতিদিন কিছুক্ষণ খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচের স্নায়ুগুলো অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন রক্তচাপ কমতে শুরু করে। ফলে হার্ট ভালো থাকে।

শরীরে রক্ত চলাচল যখন স্বাভাবিকভাবে হতে থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে।

প্রসঙ্গত, খালি পায়ে হাঁটার আরেকটি উপকারিতা হল, এই সময় ব্লাড সেলগুলি মারাত্মক অ্যাকটিভ হয়ে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:

আমাদের পায়ের তলায় থাকা একাধিক সেন্সারি নার্ভ, খালি পায়ে হাঁটার সময় অ্যাকটিভ হয়ে গিয়ে শরীরের ভিতরে পজেটিভ এনার্জি তৈরি করতে শুরু করে।

ফলে ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে নানাবিধ সংক্রমমের আশঙ্কা কমে যায়।

Barefoot Soil

রক্তচলাচলে উন্নতি ঘটে:

খালি পায়ে হাঁটের সময় মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সারা শরীরে রক্তচলাচল ঠিক মতো হতে শুরু করে দেয়। ফলে অক্সিজেন সমৃদ্ধি রক্ত বেশি বেশি করে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে গিয়ে তাদের কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো হ্রাস পায়।

পেশী ও হাড় শক্তপোক্ত হয়:

খালি পায়ে হাঁটালে পেশী ও হাড় শক্তপোক্ত হয়। অনেক সময় ডাক্তাররা বলে খালি পায়ে মাটির উপর হাঁটবেন এতে পেশী ও হাড় শক্তপোক্ত হবে।

মানসিক অবসাদ কমে:

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খালি পায়ে হাঁটলে মানসিক অবসাদ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অ্যাংজাইটি লেভেলও নিম্নমুখি হয়।

আসে খালি পায়ে হাঁটার সময় আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে এন্ডোরফিন নামক একটি ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যে কারণে ডিপ্রেশন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।

প্রদাহ হ্রাস করে:

শরীরে যদি প্রদাহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাহলে কোষের ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।। আবার হৃদরোগেরও ঝুঁকি বাড়ে।

খালি পায়ে হাঁটলে মাটিতে উপস্থিত ইলেকট্রন শরীরে প্রবেশ করে অনেকটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো কাজ করে। ফলে প্রদাহ বাড়ার ঝুঁকি কমে যায়।

দেহে ভিটামিন “ডি” জোগায়:

খালি পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটলে সূর্যের রশ্মি আমাদের দেহে ভিটামিন “ডি” জোগায়, ভিটামিন “ডি” আমাদের দেহের হাড় মজবুত করে এবং হাড়ের যেকোনো সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।

তাই সুস্থ থাকতে সকালের অথবা বিকেলের মৃদু রোদে খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটা সবারই উচিত।

করোনার এই যুগে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অনেক বিশেষজ্ঞই সকালের সূর্যের আলোয় হাঁটাহাঁটি করার পরামর্শ দেন।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়:

খালি পায়ে কিছুক্ষণ মাটিতে হাঁটলে মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা নিউরনগুলো মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে সক্রিয় হয়ে যায়। তখন একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি বুদ্ধিও বাড়তে শুরু করে।

রেফারেন্স: