করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি অনেকের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ভালো ঘুমের টিপস।
করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। এই করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি শুরুর পর থেকে রাতে ঘুম ভালো হচ্ছে না, অনেকেই এমন কথা বলছেন।
বিছানায় এপাশ ওপাশ করে, কিছুক্ষণ ফোনে ফেসবুক, ইউ টিউব ঘেঁটে, কয়েকবার ব্যালকনি, আর বারান্দা ঘুরে, হয়ত ফ্রিজে খাবার খুঁজে, আবার বিছানায় গিয়ে গড়াগড়ি করে রাত কাটাচ্ছেন।
কিন্তু তারপরেও ঘুম আসছে না? আপনাদের জন্য সহজ কিছু পরামর্শ আছে। করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বের বহু মানুষের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।
ঘুম না এলে পশ্চিমা বিশ্বে তা নিয়ে স্লিপ থেরাপি রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষের জীবন নানাভাবে বদলে গেছে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, লোকডাউন, বাড়িতে বসে কাজ করা, সংক্রমণের ভয় -এই রকম বিভিন্ন কারণে মানুষের জীবনের রুটিন, অভ্যাস পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গেছে।
রাতে বেশিক্ষন জেগে থাকছেন। আবার দিনে ঘুমিয়ে সেটা পুষিয়ে নিচ্ছেন। ঘুমের সময় ওলট-পালট হয়ে গেছে। তাই একটা রুটিন তৈরি করা জরুরি। শরীরে ঘুমের চক্র ঠিক রাখার জন্য তাই সঠিক সময়ে ঘুমোতে যাওয়া জরুরি।
ভালো ঘুমের টিপস
দেশবাসীও বুঝতে পেরেছে বাইরে না বেরিয়ে বাড়িতে কাজ করা নিরাপদ। স্কুল, কলেজ বন্ধ। তাই সারাক্ষন ঘরে বসে আছেন। শরীর ক্লান্ত না হলে ঘুম আসবে না।
দিনের বেলা বিছানাতে বেশিক্ষণ থাকবেন না। হালকা একটু গা এলিয়ে দিলেন কিন্তু দিবানিদ্রা পরিহার করুন। শরীরকে ক্লান্ত হতে দিন।
লন্ডনের কিংস কলেজসহ আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, অনেকেই ঘুমের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সর্বত্র এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বত্র। আগে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান বা খবর দেখার একটা আলাদা আগ্রহ ছিল। এখন সবসময় করোনা মহামারীর খবর।
এতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। এগুলো সবসময় হেডলাইন। উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, মানসিক সমস্যা বাড়াচ্ছে। শান্তিতে ঘুমাতে খবর কম দেখুন।
- শরীরে ঘুমের চক্র সঠিক রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠার একটি রুটিন তৈরি করুন।
- সংক্রমণের ভয়ে অনেকে ঘরে আছেন তাই দিনের বেলায় বিছানা গড়াগড়ি ছাড়তে হবে।
- কায়িক পরিশ্রম দরকার তাই ঘরের কাজ বা ঘরে বসে সাধারণ কোন ব্যায়াম করতে হবে।
- যুক্তরাজ্যের লন্ডনের কিংস কলেজের এক জরিপে দেখা গেছে দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা মহামারী শুরুর পর থেকে ঘুমের সমস্যার কথা জানিয়েছেন
- সব সময় চারপাশে করোনা সংক্রান্ত আলাপ উৎকণ্ঠার অন্যতম কারণ উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিন করোনা সংক্রান্ত খবর না দেখে অল্প সময়ের জন্য আপডেট জেনে নিতে পারেন।
- ঘুমের আগে মোবাইল ফোন পরিহার করা।
- ফোনের উজ্জ্বল আলো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। তাই ঘুমানোর ঘন্টাখানেক আগে মোবাইল থেকে বিরত থাকুন
- ভালো লাগে এমন কিছু করুন। নেতিবাচক চিন্তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার কারণ হতে পারে তাই ভালো চিন্তা করুন
- মনের প্রশান্তি তৈরিতে ও দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
- চা-কফি কম খান। ক্যাফেইন ও চিনিযুক্ত কোমল পানীয় আপনার শরীরে উত্তেজক হিসেবে কাজ করছে
- বিছানার পরিবেশ আরামদায়ক করুন। বিছানায় যাওয়ার আগে ভালো করে বিছানা পরিষ্কার করুন।
- আরামদায়ক কিছু পরে ঘুমান। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বপ্ন নিয়ে বেশি চিন্তা করে উদ্বেগ না বাড়ানোই ভালো
ভালো ঘুমের জন্য কি কি খাবার খাবেন:
ভালো ঘুমের জন্য আমরা নিচের প্রাকৃতিক খাবারগুলি চেষ্টা করতে পারি –
আখরোট বাদাম (Walnuts):
যে খাবারগুলো ভালো ঘুম আনে সেই খাবারগুলোর তালিকার সর্বপ্রথমে আখরোটের (AKHROT) অবস্থান। কি আছে এই আখরোটে যে ভালো ঘুম আনতে এতো সহায়ক।
এটি ট্রিপটোফেন-এর চমৎকার উৎস। ট্রিপটোফেন (Tryptophan) – হলো একটি অ্যামিনো এসিড যেটা ঘুম বৃদ্ধি করে থাকে।
ট্রিপটোফেন – সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নামক রস শরীরে সরবরাহ করে অর্থাৎ হরমোন উৎপাদন করে দেহঘড়িকে সচল রাখে ভালো ঘুম দিয়ে ও কর্মচঞ্চল রেখে।
আলমন্ড বাদাম (Almonds):
আলমন্ড বাদাম – ম্যাগনেশিয়াম-এ ভরপুর। প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি ভালো ঘুম আনতে ও হাড় গঠনে দারুন কার্যকর।
দুধ + মধু (Milk + Honey):
দুধে সবকয়টি ভিটামিন থাকে বলে একে পরিপূর্ণ খাবার বলা হয়। শুধু তাই নয় এতে ট্রিপটোফেন (tryptophan) থাকায় এটি ভালো ঘুম আনতে সহায়ক।
প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ মধু মস্তৃষ্কে মেলাটোনিন-এর প্রবেশ সহজ করে দেয়।
তাই ঘুমোনের আগে এক গ্লাস দুধের মধ্যে দুই চামচ মধু মিশিয়ে খান আর হারিয়ে যান ঘুমের রাজ্যে।
কলা (Banana):
প্রকৃতির খামে মোড়ানো সুস্বাদু ফল কলা পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম-এর দারুন উৎস। পটাসিয়াম রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি ভালো ঘুম আনায়ন করে থাকে।
সামুদ্রিক মাছ বা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ:
স্যামন মাছ, টুনা মাছ, ইলিশ মাছ, পোনা জাতীয় মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান।
এছাড়া বেশিরভাগ সামুদ্রিক মাছে ও তেলযুক্ত মাছে ভিটামিন-ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যা আমাদের ঘুমকে বাড়িয়ে দেয়।
হারবাল চা (Passionflower Tea বা Chamomile Tea):
হারবাল চা খাওয়ার অভ্যাস ঘুমের জন্য বেশ সহায়ক। প্রতিদিন হারবাল চা খান আর ঘুমের সাগরে হারিয়ে যান।
ভাত খাওয়ার অভ্যাস:
ভাত শুধু আমাদের প্রধান খাবার নয়। বিশ্বের অনেক দেশের প্রধান খাবার ভাত। তবে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স-এর উপরের দিকে সাদা ভাত এর অবস্থান। ভাত বেশি খেলে ঘুমও বেড়ে যায়।
এছাড়াও কিউই ফল, দই, আঙ্গুর ইত্যাদি খাবার খেলেও ঘুম ভালো হয়।
বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন আমরা কতো দামি দামি ওষুধ খাচ্ছি। ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় আমাদের ঘুমের সমস্যা হয়।
এছাড়া মানসিক চাপ, আবেগ, অনেক শব্দ ও আলো যুক্ত পরিবেশ, নাইট শিফট কাজ ইত্যাদি কারণে ঘুমের সমস্যা হয়। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।