ঘরে থেকে কাজ করার সুবিধা এবং ক্ষতিকর দিকগুলি কি কি?

বাসা থেকে অফিসের কাজ করা এখনকার দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা এমন একটি সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি যখন একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা অত্যাবশকীয়। এমন অবস্থায় পাশাপাশি বসে একসাথে অফিসে কাজ করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অগত্যা অনেক অফিস এখন বাসা থেকে কাজ করার পন্থা অবলম্বন করছে। বাসা থেকে কাজ করার সুবিধা যেমন আছে তেমনি ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বিষয়টি আবার পেশার উপরও নির্ভর করে। অনেক পেশার ক্ষেত্রে ঘরে থেকে কাজ করা সম্ভব আবার অনেক পেশার ক্ষেত্রে এটি উপযুক্ত নয়।

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হন বা আপনার সম্পূর্ণ কাজ ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন দিয়ে করা সম্ভব তাহলে আপনার জন্য ঘরে থেকে কাজ করা অনেকটাই সম্ভব। তবে আপনি যদি কোন পণ্য বা যন্ত্র তৈরীর পেশার সাথে যুক্ত হন তাহলে অফিসে আপনার উপস্থিতি ছাড়া সম্ভব না।

অনেক সেবামূলক পেশা আছে যেগুলোর কিছু কিছু ঘরে থেকে করা সম্ভব হলেও বেশিরভাগই সম্ভব নয়।

ঘরে থেকে কাজের উপকারী দিকগুলি

ঘরে থেকে কাজ করা বেশ আরামদায়ক যদি আপনি দায়িত্বশীল হন। চলুন জেনে নিন ঘরে থেকে কাজের উপকারী দিকগুলি সম্পর্কে –

যাতায়াতে সময় নষ্ট হবে না

অফিসে যাওয়ার আসার জন্য প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সময় ব্যয় করতে হয়। অফিসে যাওয়া আসা প্রায়শই খুব আনন্দদায়ক হয় না কারণ অফিস টাইমে রাস্তায় অনেক জ্যাম ঠেলে আসতে হয়। বাসা থেকে অফিসের কাজ করলে এই বেদনাদায়ক রুটিন আমরা এড়াতে পারি। পক্ষান্তরে এই সময়টা পুরাটাই ব্যবহার করা যায়।

কাজের বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা

কাজের বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার সুবিধা সহজেই অসুবিধে পরিণত হতে পারে। তবে আপনি যদি দায়িত্বশীল হন, সময়ের প্রতি যত্নশীল হন এবং সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেন তবে অবশ্যই বাসা থেকে কাজ করার সিদ্ধান্ত আপনাকে কাজের বিষয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা দিবে। তবে আপনি যদি কোন টীমের সাথে কাজ করেন তাহলে আপনার দিনকে অন্য সদস্যদের সময়ের সাথে কিছুটা সামঞ্জস্য করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস

বাসা থেকে কাজ করার আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হল স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ধরে রাখা অনেক সহজ। দুপুরে লাঞ্চের জন্য আর লাঞ্চ বাক্স অর্ডার করতে হবে না বা বাইরে থেকে তেলযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে না। ঘরে তৈরী স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরী হবে।

ঘরে থেকে কাজ আরামদায়ক

কেউই অস্বীকার করতে পারে না যে ঘরে থেকে কাজ করা খুব আরামদায়ক। পরিচিত পরিবেশে যেখানে আপনার ভাল লাগে সেখানে বসে অফিসের কাজ করতে পারা একটা চরম শান্তির ব্যাপার।

অফিসের জন্য রেডি হওয়ার জন্য আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি উঠতে হবে না, বাস বা ট্রেন ধরার তাড়া নেই এবং আপনি নিজের কর্মক্ষেত্রটিকে নিজের পছন্দ অনুসারে সাজাতে পারেন। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে বাসা থেকে কাজ করা আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতি দিবে।

প্রিয়জনকে যথেষ্ট সময় দেওয়া যায়

ঘরে থেকে কাজ করার বড় একটি সুবিধা হল প্রিয়জনকে যথেষ্ট সময় দেওয়া যায়। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে কাজের সময় নির্ধারণ করে সময়মতো করতে পারলে পরিবার ও বন্ধুদের যথেষ্ট সময় দেওয়া যায়। যদি বাচ্চা থাকে তাহলে তাদের সাথে খেলা করা বা শিক্ষণীয় কিছু করার জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়।

খরচ কম হয়

অফিসে যাওয়া আসার জন্য খরচ নেই, ব্যয়বহুল কফির খরচ নেই, ব্যয়বহুল মধ্যাহ্নভোজ নেই যা আপনাকে প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে। এসবের পরিবর্তে ঘরে আপনার কফি, চা বা খাবার তৈরি করুন – এটি কেবল আপনার অর্থ সাশ্রয় করবে না, কীভাবে দ্রুত এবং স্বাস্থ্যকর রেসিপি রান্না করা যায় তাও শিখিয়ে দেবে।

ঘরে থেকে কাজের ক্ষতিকর দিকগুলি

ঘরে থেকে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং কারণ অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হয় এবং তা পূরণ করতে হয়। চলুন জেনে নিন ঘরে থেকে কাজের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে –

বাসার কারণে অফিসের কাজে বিঘ্নতা

বাসায় ছোট খাটো অনেক বিষয় থাকে যেটা আপনার কাজের মনোযোগ নষ্ট করতে যথেষ্ট। আপনি অফিসে থাকলে হয়তো এই বিষয়গুলি না দেখলেও হতো। এইরকম অনেক বিষয় থাকে যেটা বাসা থেকে অফিস করলে কাজের বিঘ্ন ঘটায়। এইটা অস্বীকার করার উপায় নাই যে অফিসের তুলনায় বাসায় কাজের বিঘ্নতা বেশি ঘটে। আপনার কাজের সময় আপনার ঘরের কিছু পরিষ্কার করা বা কিছু ঠিক করা ইত্যাদিকে না বলতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ কমে যায়

একটি ফ্যাক্ট হল বেশিরভাগ মানুষই চাই একই সমস্যা নিয়ে কাজ করা সহকর্মীদের সাথে থাকতে। আপনি যদি বাসা থেকে কাজ করেন তবে আপনি ইমেলের বা ভিডিও কলের মাধ্যমে অফিসের অন্য ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে যেকোনো বন্ডিং এর জন্য সামাজিক যোগাযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাসা থেকে কাজের ক্ষেত্রে যেটি বেশ দুরূহ।

অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন

সারা দিন বসে থাকা সত্যিই এমন কিছু নয় যা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। ঘরে সারাদিন বসে বসে কাজ এবং কম নড়াচড়া করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। সারাদিন স্ক্রিনের সামনে বসে থাকলে আপনার পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে এবং আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম না করেন তবে এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে উঠতে পারে।

প্রমাণ করতে হবে আপনি কাজ করছেন

মানুষ সাধারণত মনে করে যে আপনি যখন বাড়িতে থাকেন আপনি যথেষ্ট কাজ করেন না। এটি একটি ভুল ধারণা যা অস্বীকার করা কঠিন। বাস্তবে, আপনি অনেক বেশি পরিশ্রম করছেন কারণ এটির উপর আপনার জীবিকা নির্বাহ করে। ঘরে থেকে কাজ করার বড় চ্যালেঞ্জ হল আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি কাজ করছেন।

সফলতা প্রডাক্টিভিটির উপর নির্ভরশীল

আমরা সবাই জানি যে সফলতা সহজে ধরা দেয় না। ঘরে বসে কাজ করে প্রোডাক্টিভিটি ঠিক রাখতে অনেক গুণাবলী থাকতে হয়। যেমন সময়ের সঠিক ব্যবহার জানতে হয় তেমনি কাজের প্রতিও প্রচন্ড আগ্রহ থাকতে হয়।