অ্যালোভেরা মুখের ঘা দূর করতে, পোড়া ক্ষত সারাতে ও পানিশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। অ্যালোভেরা আজ থেকে ৬০০০ বছর আগে মিশরে উৎপত্তি হয়েছিল।

ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে অ্যালোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খৃীষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। এর পাতা পুরু, দুধারে করাতের মত কাঁটা এবং ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাঁস থাকে।

অ্যালোভেরার বৈজ্ঞানিক নাম: Aloe vera এবং ইংরেজিতে: Medicinal aloe, Burn plant. এর ঔষধী গুণের জন্য দিনে দিনে অ্যালোভেরা সকলের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

অনেক ধরনের সমস্যার এক এবং অব্যর্থ ঔষধ অ্যালোভেরা (Aloe Vera)। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় একে বলা হয় ঘৃতকুমারী। অ্যালোভেরা ক্রিম, জেল, টুথপেস্ট, ফেসওয়াস, লোশন, শ্যাম্পুতে, তেলে এবং মলমে ব্যবহার করা হয়।

মানবদেহের জন্য যে ২২টা এমিনো এসিড প্রয়োজন তার ৮টি অ্যালোভেরাতে রয়েছে। এছাড়াও আছে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন বি-1, ভিটামিন বি-2, ভিটামিন বি-6, ভিটামিন বি-12, ভিটামিন “সি” এবং ভিটামিন “ই”।

অ্যালোভেরার স্বাস্থ্য উপকারিতা

চুল পরিষ্কার করতে, চুলে পুষ্টি জোগাতে এবং চুল ঝলমলে উজ্জ্বল রাখতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার কোনও জুড়ি নেই। নিচে এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

মুখের ঘা দূর করতে সহায়তা করে:

মুখের ঘা কম বেশি সবারই হয়ে থাকে। এটা সাধারণত মুখের ভিতরে ঠোঁটের নীচে এবং প্রায় এক সপ্তাহ ধরে থাকে।

অ্যালোভেরাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট থাকার কারণে এটি মুখের ঘা দূর করতে সাহায্য করে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে:

২০১৪ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা জেল মাউথ ওয়াশের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

এতে এমন একটি উপাদান আছে যা মুখের জীবাণু দূর করে মাড়ি ফোলা, মাড়ি থেকে রক্তপাত বন্ধ করে দিয়ে থাকে। এছাড়া মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।

পোড়া ক্ষত সারাতে:

অ্যালোভেরার ঔষধী গুণের জন্য, ময়শ্চারাইজিং এবং শীতলকারক বৈশিষ্টের কারণে, এটি পোড়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

২০১৩ সালে ৫০ জন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি স্টাডিতে দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরা প্রাথমিকভাবে পুড়ে যাওয়া ক্ষত নিরাময়ে এবং ব্যথার উপশম কমাতে পারে।

হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে:

অ্যালোভেরার শরবত খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং জ্বালাময়ী আন্ত্রিক সিন্ড্রোম (IBS) সহ পেটের সমস্যা নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।

২০১৮ সালে ১৫১ জনের তিনটি গবেষণায় প্রমাণ করে যে, অ্যালোভেরা IBS এর লক্ষণগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

অ্যালোভেরা পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ফলে, খাবার হজম হয় দ্রুত।

একই সঙ্গে এটি অন্ত্রের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমায় এবং ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। এতে স্বাভাবিক ভাবেই হজম ক্ষমতা বাড়ে।

ব্রণ দূর করে:

অ্যালোভেরার জেল ব্যবহারের ফলে ব্রণ দূর হয়ে যায়। অ্যালোভেরাতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল এবং এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের রয়েছে যা ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী।

ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে, মসৃণ রাখতে, দাগ মুক্ত করতে এবং ত্বকে ব্রণের উপদ্রব কমাতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী।

মলদ্বার ফেটে গেলে:

মলদ্বার ফেটে কষ্ট পাচ্ছেন! তাহলে দিনে কয়েকবার ফেটে যাওয়া জায়গায় অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরা ক্রিম লাগান।

২০১৪ সালের একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার যুক্ত ক্রিম ব্যবহারের ফলে দীর্ঘস্থায়ী মলদ্বারে ফেটে যাওয়া স্থানের জন্য কার্যকর ছিল।

এছাড়া ফেটে যাওয়া স্থানে ব্যথা কমাতে, ক্ষত নিরাময় করতে ও রক্তক্ষরণ কমাতে কার্যকরী।

পানিশূন্যতা দূর করে:

অ্যালোভেরার শরবত খুবই শীতলকারক ও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকে, তাই এটি পানিশূন্যতা প্রতিরোধে একটি আদর্শ উপায়। অ্যালোভেরার শরবত গরমে শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

গরমে যে পরিমাণ ঘাম বের হয়ে যায় তা পূরণের জন্য অ্যালোভেরার শরবত কার্যকরী। কঠোর পরিশ্রমের পরে ডাবের পানির পরিবর্তে অ্যালোভেরার শরবত খেতে পারেন।

লিভারের জন্য ভালো:

অ্যালোভেরার শরবত আপনার লিভারকে সুস্থ রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়।

কারণ দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্ট ও হাইড্রেটেড থাকলে লিভার সর্বোত্তমভাবে কাজ করে। অ্যালোভেরার শরবত লিভারের জন্য আদর্শ কারণ এটি হাইড্রেটিং এবং ফাইটোনিট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ।

কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য:

অ্যালোভেরার শরবত পান করলে এটি আমাদের অন্ত্রের পানির পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্ত্রে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মলকে সাধারণত সহজে বের হতে সহায়তা করে। যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বা ঘন ঘন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয় তবে আপনার প্রতিদিনের রুটিনে অ্যালোভেরার জুস যুক্ত করার চেষ্টা করুন।

দাঁতের সমস্যা দূর করে:

দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির রোগগুলি খুব সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা দূর করার সর্বোত্তম উপায় হল দাঁতের প্লেগ বা ব্যাকটিরিয়া তৈরিতে বাধা দেওয়া।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা দাঁতের সমস্যা দূর করতে পারে।

ঘামাচি দূর করতে:

অ্যালোভেরাতে এন্টি- ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিসেপ্টিক প্রপার্টি আছে। তাই অ্যালোভেরা ঘামাচি দূর করতে সহায়তা করে।

এছাড়া এতে শীতল কারক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঘামাচি চুলকানি, যন্ত্রনা কমাতে পারে।

সতর্কতা

আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অ্যালোভেরা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

রেফারেন্স: