আদা চা মাথা ব্যথা দূর করতে, জ্বর সর্দি-কাশি প্রতিরোধে ও মোশন সিকনেস কমাতে কার্যকরী।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম গরম চা না পেলে যেন দিনটাই শুরু হয় না। শুধু ঘুম থেকে উঠেই নয় যেকোনো সময় শরীরকে চাঙ্গা ও সতেজ রাখতে এক কাপ চায়ের জুরি মেলা ভার।
চা শুধু শরীরটাকে চাঙ্গা রাখে না বরং এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুন। চায়ের ঔষধি গুন বৃদ্ধি করতে চায়ে যোগ করুন আদা। যা চায়ে আরও দ্বিগুণ স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। হরেক রকমের উপকারি চায়ের মধ্যে অন্যতম আদা চা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা ও মাথাব্যথা দূর করতে সহায়ক হিসেবে পান করা হয় আদা চা।
কেবলমাত্র জ্বর বা সর্দি-কাশির দাওয়াই হিসেবেই না, মোশন সিকনেস আর মাথাব্যথার বিপরীতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম আদা চা। আদাতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব রয়েছে। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা খুবই কার্যকরী। এছাড়া আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা রোগ-জীবাণু ঠেকায়।
আদায় আমিষ ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ বা ফাইবার ২·৪%, খনিজ পদার্থ, ১·২% ও পানি ৮০·৮% থাকে বলে শরীরের জন্য উপকারী।
আদা চায়ের উপকারিতা
নিচে আদা-চায়ের উপকারিতা আলোচনা করা হলো –
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:
আদা চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। কারণ আদাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং চাপ কমাতে সহায়তা করতে পারে। আদা চা থেকে বাষ্পের শ্বাস নিলে সাধারণ ঠান্ডা, অ্যালার্জি এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা কমে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে:
ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যধি দূরে রাখতে পারে আদা চা। ৩০ জন ব্যক্তির একটি গবেষণায়, প্রতিদিন ২ গ্রাম আদা কোলনে প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সিগন্যালিং অণুগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আদা কার্যকর। তাই প্রতিদিন ১ কাপ আদা চা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
পেটের জন্য ভালো:
আদা চা হজমজনিত সমস্যাগুলি প্রশমিত করতে পারে। হজমশক্তি উন্নতি করতে এবং খাবারের শোষণ বৃদ্ধিতে কার্যকর আদা চা। এছাড়া বমি বমি ভাব দূর করতে এটি বিশেষ ভাবে সহায়তা করে থাকে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন আদা চা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
মোশন সিকনেস:
যখন আমাদের মস্তিস্ক অসাম্যঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য গ্রহণ করে তখন আমাদের কান, চোখ ও নার্ভ-এর মাধ্যমে মোশন সিকনেস অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখনি বমি বমি ভাব দেখা দেয়, মাথা ঘোরে, ঘাম হয়। ক্লান্তিভাব চোখেমুখে ফুটে ওঠে।
আদা চা মোশন সিকনেস লক্ষণগুলি মাথা ঘোরা, বমি কমাতে সহায়তা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদা মোশন সিকনেস হ্রাস করতে সহায়তা করে।
ওজন কমায়:
ওজন এবং স্থূলত্বের ক্ষেত্রে আদা চা ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। আদা চা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে এবং মোটা হয়ে যাওয়া রোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ২০১২ সালের একটি অধ্যয়নে দেখা গেছে ১০ জন অতিরিক্ত ওজনের লোক গরম আদা চা পান করার ফলে তাদের ক্ষুধা কমে যায়।
হার্টের জন্য ভালো:
উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হার্টের রোগের ঝুঁকির জন্য দায়ী। আদা চা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং এতে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামিনো অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার সম্ভাবনা হ্রাস পাই। আদা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্যকারী ধমনীতে ফ্যাট জমতে বাধা দিতে পারে।
ব্যথা দূর করে:
আদা কয়েক শতাব্দী ধরে শরীরের ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষত হাঁটুর অস্টিওআর্থারাইটিস (osteoarthritis) এর ব্যাথা উপশম করতে এটি বেশ কার্যকরী। এছাড়া আদা চা মাথা ব্যথা, ঋতুস্রাবের ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, পেশী ব্যথা এবং অন্যান্য ধরণের ব্যথা উপশমে সহায়তা করতে পারে।
মাথা ব্যথা দূর করতে:
যারা মাথা ব্যথার সমস্যার সাথে ভুগছেন তাদের জন্য একটি ঘরোয়া টোটকা হচ্ছে আদা। যখন অতিরিক্ত মাথা ব্যাথা শুরু হয় তখন আদা চা মাথাব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
জ্বর, সর্দি-কাশি প্রতিরোধে:
জ্বর, সর্দি-কাশি দূর করতে আদা চায়ের জুড়ি মেলা ভার। জ্বর জ্বর ভাব, গলাব্যথা, সর্দি দূর করতে সাহায্য করে। কাশির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। গলায় জমে থাকা কফ দূরে করতেও আদা কার্যকরী।
কফ সমস্যা দেখা দিলে আদা কুচি করে ২ কাপ পানিতে ফুটিয়ে নিন। কিছুক্ষণ ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সাথে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন। এতে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
কীভাবে আদা চা তৈরি করবেন
আদা ভালোভাবে পরিষ্কার করে খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর একেবারে পাতলা করে কেটে নিন অথবা থেতলে নিন। তারপর ১ কাপ পানি নিয়ে ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ফোটা শুরু হয়ে গেলে আদা দিয়ে দিন। ২-৩ মিনিট জ্বাল দেওয়ার পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে চুলা বন্ধ করে দিন। ১০ মিনিট ধরে এভাবে রেখে দিন। তারপর কাপে ঢেলে মধু, লেবুর রস দিয়ে আদা চা পরিবেশন করুন।
ক্ষতিকর দিক
আদা চা পান করার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তবে আপনি যদি খুব বেশি পরিমাণে পান না করেন তবে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদা সম্পর্কিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে গ্যাস, ফোলাভাব, অম্বল এবং বমি বমি ভাব। যেহেতু আদা রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে এবং রক্ত পাতলা করার প্রভাব ফেলতে পারে, তাই রক্তের পাতলা বা রক্তচাপের ওষুধের লোকেরা অতিরিক্ত আদা খাওয়ার আগে তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।