অহংকারী চড়ুই পাখির গল্প।
এক চড়ুই তার পরিবার নিয়ে একটা বেগুন গাছে বাসা বেঁধে বসবাস করত। চড়ুই পরিবার বলতে চড়ুই আর তার বউ। চড়ুই খুব বেশি দিন আগে বিয়ে করেনি। বেগুন গাছে চড়ুই যে বাসায় থাকে সেটা অন্য পাখিদের বাসার তুলনায় বেশ সুন্দর।
টুনটুনি ও দোয়েল তার বাসা দেখে খুব প্রশংসা করেছে। এমনিতেই চড়ুইয়ের মনে খুব হিংসা, তার উপর অন্যের প্রশংসা শুনে তার পা আর মাটিতে পড়ে না। সে অন্য পাখিদের এনে তার বাসা দেখায়। যারা তার বাসাকে ভালো বলে তাদের সঙ্গে সে আরও বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে।
কোকিল তার বাসা দেখে এত খুশি হয়েছে, তার বাসায় এসে গান গায়। ময়না তার বাসা দেখে খুশি হয়ে তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। কিন্তু চড়ুই তার কাজ আছে বলে গল্প করা এড়িয়ে যায়। সে আরও বলে টিয়া তাকে নিয়ে তার বাসা বানিয়ে নিয়েছে। এসব কথা শুনে অন্য পাখিরা রীতিমত অবাক হয়ে যায়।
ছোট পাখিদের এসব মিথ্যা কথা শুনিয়ে তার আর ভালো লাগে না, সে মনে মনে ভাবে যদি বড় পাখিদের এমন কথা শুনানো যায় তাহলে তারা তাকে বেশ অভিজ্ঞ ভেবে সম্মান করবে। যেই কথা সেই কাজ। চড়ুই মিথ্যা বলতে প্রথমে গেল কাকের কাছে।
কাক যে ডালে বসে আছে সে ডালে বসার সঙ্গে সঙ্গে কাকের মাথা গেল গরম হয়ে, সে চড়ুইকে বলল তুই পুঁচকি পাখি হয়ে আমার পাশে বসার সাহস কোথায় পেলিরে। কাকের গরম মেজাজের কর্কশ কথা শুনে চড়ুই খুব ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
এরপর গেল ফিঙের কাছে। ফিঙে বলল, তুই ছোট্ট পাখি আমাকে বাসা বানানো শেখাতে আসিস যা দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে। এই বলে ফিঙে তাকে তাড়িয়ে দিল। তারপর চড়ুই গেল টিয়ের কাছে। টিয়ে তো তাকে এক ঠোকর দিয়েই বসলো।
বড় পাখিদের কাছ থেকে অপমানিত হয়ে তার মনে আরও বেশি হিংসা বাসা বাঁধলো। সে ঠিক করল যে বড় পাখিদের থেকে উঁচু ডালে বাসা বানাবে। উঁচু ডালে বাসা বানানোর কথা তার বউকে জানালো। বউ প্রথমে রাজি হলো না।
কিন্তু চড়ুইর জন্য রাজি হতে হলো। অল্প কদিনের মধ্যেই জামরুল গাছের উঁচু ডালে যেখানে বড় পাখিরা পর্যন্ত ঝড়ের ভয়ে বাসা বাঁধে না সেখানে বাসা বাঁধলো। সে আর তার বউ মিলে রঙিন পাতা কুড়িয়ে সুন্দর বাসা বানালো।
রঙিন পাতার বাসা এবং এত উঁচুই বানানো বাসা কয়েকটি বড় পাখির দৃষ্টি আকর্ষণ করল। তারা দেখতে গেল কে এই বাসা বানিয়েছে।
বড় পাখিরা যে তার বাসা দেখতে এসেছে এতে চড়ুই এর অহংকার আরও বেড়ে গেল। সে ভাবল উঁচুতে বাসা বাঁধার কারণে বড় পাখি তাকে দেখতে আসছে। সে যদি আরও উঁচুতে বাসা বাঁধে তাহলে আরও অনেক বড় পাখি তাকে দেখতে আসবে।
চড়ুই এ বাসাটি ভেঙে আরও উঁচু ডালে বাসা বাঁধলো। চড়ুই যখন বাসা বাঁধলো তখন চৈত্রের শেষ। উঁচু ডালে চড়ুই আর চড়ুই বউ বেশ সুখের ঘর সংসার করছে। অল্প কয় দিনের মধ্যে চড়ুই বউ দুটি ডিম পাড়ল।
চড়ুই আর চড়ুই বউ এর মনে আনন্দ ধরে না। তাদের প্রথম ছানা হবে সে জন্য চড়ুই বউ রাতদিন ডিমে তা দেয়। আর চড়ুই তার জন্য ভালো ভালো খাবার জোগাড় করে আনে।
বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। এরই মধ্যে শুরু হলো কালবৈশাখী ঝড়। প্রচণ্ড ঝড়ে উঁচু ডালটিতে তারা থাকতে পারলো না। তারা ছোট গাছে এক টুনটুনির বাসার আশ্রয় নিল।
তাদের ডিম দুটি পড়ে রইল উঁচু ডালের বাসায়। পাখিদের তো আর হাত নেই। যে হাত দিয়ে ডিম নিয়ে আসবে। নিরুপায় হয়ে ডিম দুটি রেখে আসতে হলো উঁচু ডালের বাসায়। ঝড় থেমে গেলে চড়ুই আর চড়ুই বউ ফিরে এলো তাদের বাসার কাছে।
কিন্তু তারা বাসাটিকে দেখতে পেল না। এমন কি যে ডালটিতে বাসা বাঁধছিল সেটিও দেখতে পেল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দূরে ডালটি ভেঙে পড়ে থাকতে দেখে ভাঙা ডালটির কাছে গেল।
সেখানে গিয়ে দেখতে পেল ভাঙা ডালটির গায়ে বাসাটি তখনো লেগে আছে এবং ডিম দুটি ভেঙে দুটি ছোট ছানা মরে পড়ে আছে।
মৃত ছানা দেখে চড়ুই বউ কান্না জুড়ে দিল। চড়ুই মনে মনে নিজের হিংসা আর অহংকারকে দোষ দিতে লাগল। যদি সে অহংকারের বশবর্তী হয়ে উঁচু ডালে বাসা না বাঁধতো তাহলে আজ তার ছানা দুটি মরে যেত না।