রাখালের পিঠা গাছ। গল্প।
একদা এক রাজ্যে একজন গরীব মহিলা বাস করত। তার এই পৃথিবীতে একটি মাএ ছেলে ছাড়া আপন বলতে কেউ ছিল না। সেই মা শত কষ্টেও তার ছেলের কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখত না।
একদিন ছেলেটি তার মায়ের কাছে বায়না ধরলো যে সে তেলের পিঠা খাবে। কিন্তুু তাদের বাড়িতে পিঠা তৈরী করার জন্যে চাল ছিল না। কেননা তারা শুধু মাএ বনের ফল খেয়েই তাদের জীবন অতিবাহিত করতো।
তাই মা ছেলেকে বললো “বাবা আঙ্গেরে তো চাউল নাই তাই আজক্যা রাইতত বাড়ির গরুগুলারে মোরলের ধান বাড়িতে ছাইড়া দিবি”। ছেলে তার মায়ের কথামতো গরুগুলো মোরলের ধান বাড়িতে ছেড়ে দিল। গরুগুলো সারা রাত ধান খেল তারপর ছেলেটা গরুগুলোকে তাদের বাসায় নিয়ে আসলো।
এরপর গরুটি যতোই পায়খানা করতে থাকলো ততই গোবরের ভিতরে ধান বের হলো। মা সেই গোবর পানি দিয়ে ধুয়ে ধান বের করলো এবং তারপরে তা থেকে তার ছেলেকে পিঠা বানিয়ে দিলো। ছেলেটি তৃপ্তি সহকারে পিঠা খেলো এবং একটা পিঠা বালুতে পুতে রাখলো। এরপর এই ছেলেটা সবসময়ই দেখতো তার পিঠের গাছ কখন গজায়।
একদিন ছেলেটা দেখতে পেলো তার পিঠের গাছ গজিয়েছে। এরপর গাছটি ছেলেটির সবসময়ের বন্ধু হয়ে গেল। একটু একটু করে দিনে দিনে গাছটি বড় হতে লাগলো।
একপর্যায়ে গাছটিতে ফুল ও পিঠা ধরতে শুরু করলো। সেই গাছের কাছাকাছি এক বনে এক বুড়ি রাক্ষসী ও তার মেয়ে বাস করতো।
রাক্ষসী বুড়িটার ইচ্ছা ছিল ছেলেটা কে খাওয়ার তাই সে মানুষের রুপে পিঠা গাছের নিচে আসে এবং বলে, বাবা কুদ্দিন থাইকা কিছু খাইনাইক্যা বাবা তুমার গাছোত থেক্যা আমাক দুইটে পিঠা দিব্যা।
হ দুমুনা ক্যা নেও।
এই বলে ছেলেটি একটা পিঠা বুড়িকে দেয় কিন্তু বুড়ি সেগুলো মাটিতে ফেলে দেয়। বাবা তুমি যে পিঠা দিলা ওল্যা তো মাটিতে পইড়া গেলো গুরত আইসা দেও। ছেলেটা হাতের কাছে আসতেই বুরিটি তাকে বস্তায় ভরে বাড়ির দিকে খুশি মনে হাটতে শুরু করলো।
বুড়িটির রাস্তায় প্রাকৃতিক চাপ দিলে সাড়া দিতে যায় এই সুযোগে ছেলেটা বস্তা থেকে বের হয় এবং সেখানে কাটা বৃক্ষ রেখে দেয়। বুড়ি বাড়িতে গিয়ে তার মেয়ে কে রান্না করতে বলে কিন্তু মেয়েটি বস্তা খুলে কাটা বৃক্ষ দেখতে পায়। এবারের মতো ছেলেটা বেঁচে যায়।
আবারও পরের দিন ওই বুড়িটি পিঠা গাছের নিচে যায় এবং পিঠা চায় কিন্তু ছেলেটা এইবার বলে, ধুরু বুড়ি তক আগের বার পিঠা দিবার গেছিলাম আর তুই আমাক ধইরা নিয়া যাবার ধরছিলি ভাগ তক আর আমি পিঠা দুমুনা।
বুড়িটি ছেলেটিকে বলে সে ওইটা মজা করছিল ছেলেটার বুড়ির প্রতি মায়া হয় এবং পিঠা দিতে গেলে বুড়ি আবারও ছেলেটিকে বস্তায় ভরে এবার সরাসরি বারিতে নিয়ে যায় এবং গাছের সাথে বেধে ফেলে।
বুড়িটি তার মেয়েকে ছেলেটাকে জবাই করে রান্না করতে বলে গাও ধুইতে চলে যায়। যেই ছেলেটির হাতের বাধন খোলা হয় অমনি বুড়ির মেয়েকে এক কোপে হত্যা করে ছেলেটি এবং বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। বুড়িটা তার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করে এবং তারা অজান্তেই তাদের মেয়েকেই রান্না করে খেতে বসে মেয়েটির স্বামী হাতের আংটি দেখে বুঝতে পারে এইটা তারই স্ত্রীর মাংস।
আর তখনই তারা ছেলেটা কেও দেখতে পায় এবং ধাওয়া করে এক ডুবেই নদী পেরিয়ে ছেলেটি বলে, তরি বেটিক তকি খিলালাম।
এরপর রাখাল ছেলেটি আবার তার সেই পিঠা গাছে ফিরে যায় এবং মা ও ছেলে সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকে।