বীট জুস রক্তচাপ কমায়, হার্ট সুস্থ্য রাখে ও লিভারের জন্য ভালো।

কি সুন্দর দেখতে? রঙ্গিন, লাল বীট রুট দিন দিন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিট বাঙালিদের কাছে অতটা জনপ্রিয় না হলেও এর স্বাস্থ্যসুবিধার কথা চিন্তা করে অনেকেই এখন এটিকে খাবারের মেন্যুতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি আপনি এটি ব্লেন্ডারে রস বা জুস করে খেতে পারেন এতে অনেক বেশি উপকার পাবেন।

বিট কেটে নিয়ে তার সাথে ১ কাপ পানি, পরিমান মতো লেবুর রস, লবণ, পুদিনা পাতা ও কাঁচা মরিচ কুচি। এবার সব কিছু একসাথে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর ছেকে পান করুন স্বাস্থ্যকর বিটের জুস।

দেহ প্রয়োজনীয় খনিজ ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিছু খনিজ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আর কিছু স্বাস্থ্যকর হাড় এবং দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয়।

বীটের রস প্রয়োজনীয় খনিজে ভরপুর। এটি ফাইবার, ফোলেট, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন “সি” এর দুর্দান্ত উৎস।

নিচে বীট জুস খাওয়ার উপকারিতা দেওয়া হলো –

রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে:

বিটের রস রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

গবেষকরা দেখেছেন যে যারা প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার বিট রস পান করেন তাদের সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপ হ্রাস পেয়েছিলো।

এছাড়া বীটের রসে থাকা নাইট্রেটস যা রক্তে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তর হয় এবং রক্তনালী প্রশস্ত ও শিথিল করতে সহায়তা করে। ফলে রক্তচাপ মাত্রা ঠিক থাকে।

শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি:

২০১২ সালের একটি ছোট স্টাডি অনুসারে, বীটের রস পান করায় প্লাজমা নাইট্রেটের মাত্রা এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাইকেল চালকরা যারা প্রতিদিন বীটের রস পান করেন তারা তাড়াতাড়ি সাইকেল চালাতে পারে। এ থেকে মনে করা হয় যে বীটের রস শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

হার্টের জন্য ভালো:

বীটের রস নাইট্রেটের দারুন উৎস। নাইট্রেটস এমন যৌগ যা দেহে নাইট্রিক অক্সাইডে রূপান্তরিত হয়। নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালীগুলি খুলে দেয় যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দনকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।

এছাড়া মোট কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে এবং HDL “ভাল” কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে যা হার্টের জন্য ভালো।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হার্ট ফেইলিওর লোকেরা বীটের রস পান করার ২ ঘন্টা পরে পেশী শক্তি ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মস্তিষ্কের জন্য ভাল:

বীটে উপস্থিত নাইট্রেট অক্সিজেন প্রবাহ বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, অনুশীলন বা ব্যায়ামের সময় মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে বীটের রস দারুন কার্যকর ভূমিকা রয়েছে।

২০১১ সালের স্টাডি অনুসারে, বীটের রসে থাকা নাইট্রেট বয়স্ক ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে এবং জ্ঞানীয় অবনতিকে ধীর করতে সহায়তা করতে পারে।

ওজন ঠিক রাখতে সহায়তা করে:

বীটের রসে ক্যালরি কম এবং কোনও ফ্যাট থাকে না। এটি আপনার সকালের স্মুদি জন্য দুর্দান্ত বিকল্প।

বীটের রস দিয়ে যদি আপনার দিন শুরু করতে পারেন তাহলে এটি আপনার ওজন ঠিক রাখার পাশাপাশি শরীরে পুষ্টি এবং শক্তি বাড়িয়ে তুলবে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে:

বীট বিটলাইন (betalains) থেকে রঙ পায় যা জল দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

একটি ২০১৬ সালের স্টাডি থেকে জানা গেছে, বিটলাইনের কেমোথেরাপির মতো কিছু ক্ষমতা রয়েছে যা ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

পটাসিয়ামের ভাল উৎস:

পটাসিয়াম শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। বীট পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস। পটাসিয়াম শরীরকে ইলেক্ট্রোলাইট করতে, স্নায়ু এবং পেশী সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।

একটি উচ্চ-পটাসিয়াম ডায়েট রক্তচাপ হ্রাস করতে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এবং অস্টিওপরোসিস ও কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

পরিমিতি পরিমানে বীটের রস পান করা পটাসিয়ামের স্তরকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

ফোলেটের ভাল উৎস:

ফোলেট স্বাস্থ্যকর কোষ বিভাজনকে সমর্থন করে এবং শিশুর জন্মগত ত্রূটি হ্রাস ও ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশকে নিশ্চিত করে।

বীটের রস ফোলেটের একটি ভাল উৎস। যদি সন্তান জন্মদানের কালে বয়স হয় তবে ডায়েটে দৈনিক ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট যুক্ত করা উচিত।

লিভারের জন্য ভাল

বীটে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি থাকে যা আমাদের লিভারকে স্বাস্থ্যকর রাখে – যেমন আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, বেটানিন এবং ভিটামিন “বি”।

বীট লিভারকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও এই সবজিতে দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করতে সহায়তা করে।

রক্তশুন্যতা দূর হয়

আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন মাত্রায় বেড়ে যায় বিটের রসে। ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশুন্যতা দূর হয়।

সতর্কতা

প্রস্রাব এবং মল বীট খাওয়ার পরে লাল বা গোলাপী হতে পারে। যদি রক্তচাপ কম থাকে তবে নিয়মিত বীটের রস পান না করা ভালো।

এছাড়া আপনি যদি ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনি পাথরের ঝুঁকিতে পড়ে থাকেন তবে বীটের রস পান করবেন না। বিটে অক্সালেট বেশি থাকে।

যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।

আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো চিকিৎসকের তত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করলে বা বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করলে অবশ্যাই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন।

রেফারেন্স: