পেঁপে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিকস প্রতিরোধ করে এবং বয়স ধরে রাখে।

পেঁপে একটি নরম, রসালো ফল যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি হিসাবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খায়। পেঁপে মিষ্টি স্বাদ, স্পন্দনশীল রঙ রয়েছে।

এর অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। এর ইউনানী নাম পাপিতা এবং আর্য়ুবেদিক নাম অমৃততুম্বী। পেঁপে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে বৃদ্ধি পায়। এর উৎপত্তি সম্ভবত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রান্তীয় অঞ্চলে, সম্ভবত দক্ষিণ মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকা থেকে।

সুস্বাদু ফল পেঁপে অবিশ্বাস্যভাবে স্বাস্থ্যকর গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল যা বছরের বেশিরভাগ সময়ে পাওয়া যায়। এটি উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং আমাদেরকে বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে।

পেঁপের পুষ্টি উপাদান

সকলের খুবই পছন্দের ফল পেঁপেতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি নিচে দেওয়া হলো –

  • ক্যালোরি:৫৯
  • কার্বোহাইড্রেট: ১৫ গ্রাম
  • ফাইবার: ৩গ্রাম
  • প্রোটিন: ১ গ্রাম
  • ভিটামিন “সি”: ১৫৭% (RDI)
  • ভিটামিন “এ”: ৩৩% (RDI)
  • ফোলেট (ভিটামিন বি-9): ১৪% (RDI)
  • পটাশিয়াম: ১১% (RDI)

এছাড়া এতে পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-1, বি-3, বি-5, “ই” এবং “কে” রয়েছে। পেঁপেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যারোটিনয়েডস নামে পরিচিত – যা এক প্রকারের লাইকোপেন।

পেঁপের উপকারিতা

পেঁপের উপকারীতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো –

হার্টের জন্য ভালো:

সুমিষ্ট ফল পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন যা আমাদের হার্টকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস যা কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন কে বাধা দেয় যা আমাদের শরীরের হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে।

কলেস্টেরল কমায়:

ফাইবার, ভিটামিন “সি” এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ ফল পেঁপে যা রক্তে কলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অত্যধিক কলেস্টেরল হৃদরোগ এবং হাইপারটেনশন সহ অনেক হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে:

ওজন কমাতে হলে অবশ্যই শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি কমানো উচিত। পেঁপেতে ক্যালরির পরিমাণ কম কিন্তু ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ খুব বেশি। ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় নিয়মিত পেঁপে খেলে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না।

তার উপর পেঁপেতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্যালরি বার্ন করে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এজন্য আমাদের শরীরের ওজন কমাতে পেঁপে খুবই কার্যকরী।

ডায়াবেটিকসের জন্য ভালো:

মিষ্টি স্বাদযুক্ত পেঁপেতে চিনির পরিমাণ খুবই কম এবং ইহার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও কম। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য পেঁপে একটি উত্তম খাবার। যাদের ডায়াবেটিস নাই তাদের জন্যও পেঁপে খুবই ভালো খাবার কারণ পেঁপে ডায়াবেটিক প্রতিরোধ প্রতিরোধে সহায়তা করে। 

চোখের জন্য ভালো:

ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ ফল পেঁপে। ভিটামিন এ আমাদের চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের খাদ্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-ক্যারোটিন গ্রহণ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।

বিটা-ক্যারোটিনে সমৃদ্ধ খাদ্যগুলি প্রোস্টেট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পেঁপেতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-ক্যারোটিন পাওয়া যায় এজন্য নিয়মিত পেঁপে খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। এছাড়া পেঁপে তে বিদ্যমান এনজাইম পাপাইন, ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিরোধ করে।

বয়স কম দেখাতে সাহায্য করে:

আমরা সবাই সবসময় নবীন থাকতে চাই কিন্তু সেটা কারো পক্ষেই সম্ভব না। সময়ের সাথে সাথে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়বে এটাই স্বাভাবিক। চেহারায় ছাপ পড়ার এই প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ করা সম্ভব নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস এর মাধ্যমে। পেঁপেতে ভিটামিন “সি”, ভিটামিন “ই” এবং বিটা ক্যারোটিন এর মত এন্টিঅক্সিডেন রয়েছে যা ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বয়স বৃদ্ধির লক্ষণ গুলি রোধে সহায়তা করে। 

অনিয়মিত মেন্সট্রুয়েশন (মাসিক):

পেঁপের জুস নারীদের মেনস্ট্রুয়েশন (মাসিক) প্রবাহকে ঠিক রাখতে সহায়তা করে। কাঁচা বা পাকা পেঁপে কে বলা হয় অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়েশন এর প্রাথমিক চিকিৎসা।

হজম উন্নত করে:

প্রায়শই আমরা তেলের তৈরি রেষ্টুরেন্ট খাবার খেয়ে থাকি যা আমাদের পাচক সিস্টেমের জন্য ভালো না। দৈনিক পেঁপে খেলে পাচক যন্ত্রনা নিরাময় করতে পারে, কারণ এটিতে একটি পাচক এনজাইম রয়েছে যা পেপাইন নামে পরিচিত, যা আপনার পাচক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে।

এছাড়াও পেঁপে চুল পড়া, জন্ডিস রোগীদের এবং স্কিন এর জন্য খুব ভালো। আমরা সবাই জানি যে পেঁপে খুব উপকারী একটা ফল ও সবজি। এখন সারা বছর পেঁপে পাওয়া যায়। তবে এটি গ্রীস্মকালে বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টি গুনে ভরপুর ও দামে সস্তা, তাই কাঁচা বা পাঁকা পেঁপে আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিৎ।

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট পড়ুন: