টমেটো হার্ট সুরক্ষিত রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

টমেটো একটি রসালো পুষ্টিকর ফল, বেশিরভাগ সময় খাওয়া হয় সবজি হিসাবে। টমেটোকে বাংলার আপেল বলা হয়। পুষ্টিকর উপাদানের কথা বলতে গেলে বলা যায় টমেটোতে, আপেল-এর চেয়ে বেশি পুষ্টিকর উপাদান বিদ্যমান।

স্বাস্থ্য সুবিধার কথা চিন্তা করে দামে সস্তা টমেটোকে আমরা আপেল-এর উপরে রাখবো।

টমেটো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লাইকোপিনের অন্যতম উৎস, যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস সহ অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার সাথে যুক্ত। এছাড়াও টমেটো ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন কে এর দুর্দান্ত উৎস।

টমেটো কি ফল না সবজি ?

এখনও পর্যন্ত অনেকের কাছে এটা পরিষ্কার নয় যে, টমেটো কি একটি ফল না সবজি। এটা একটা ভালো প্রশ্ন। উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা এটাকে ফল হিসাবেই গণ্য করেন কারণ টমেটো ovary অর্থাৎ মাতৃজননাঙ্গ থেকে বেড়ে ওঠে এবং নিজের দেহের অভ্যান্তরে বীজ বহন করে।

সবজির মতো ব্যবহার ও পরিবেশন করা হয় বলে বেশীরভাগ মানুষ এটাকে সবজি হিসাবে ধরে নেয়। তবে আসল কথা হলো, ফলের মধ্যে পড়ুক বা সবজির মধ্যে পড়ুক সেটা কোনো বিষয়ই না। সবথেকে বড়ো কথা হলো টমেটো অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু।

টমেটোর পুষ্টিগুণ :

টমেটোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান:

  • ক্যালোরি: ১৮
  • পানি: ৯৫%
  • প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
  • কার্বস: ৩.৯ গ্রাম
  • চিনি: ২.৬ গ্রাম
  • ফাইবার: ১.২ গ্রাম
  • ফ্যাট : ০.২ গ্রাম

টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা

টমেটোর পুষ্টিগুণ অনেক। টমেটোর স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো –

ক্যান্সার প্রতিরোধক

তবে টমেটোর পুষ্টিগুণের কথা বলতে গেলে অন্য সবকিছু ভুলে যে কথাটি সবার প্রথমে বলতে হয় তা হলো – টমেটোতে বিদ্যমান ” লাইকোপেন ” এর কথা। লাইকোপেন হলো একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

একটি স্বতন্ত্র ফাইটোকেমিক্যাল কম্পাউন্ড – যেটা শুধুমাত্র টমেটোতে বেশি পরিমানে পাওয়া যায় এবং এটা খুবই কার্যকারী একটি উপাদান।

টমেটো প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ফুসফুস, স্টোমাক, প্যানক্রিয়াস , কোলন , রেকটাম, ওরাল ক্যাভিটি, breast, এবং cervix ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে।

হার্ট এর জন্য খুব উপকারী

যে কথাটি বলতে হয়, লাইকোপেন healthy cholesterol (HDL)-এর পরিমান বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরোল (LDL)-এর পরিমান কমিয়ে দেয়।

এর ফলে ধমনীর গায়ে জমে থাকা চর্বি দূর হয় এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাই। ফলে হার্ট ভালো থাকে। কার্ডিভাস্কুলার disease অর্থাৎ হার্ট attack এবং স্ট্রোক বর্তমান পৃথিবীতে সবথেকে মরণঘাতী রোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে।

মধ্যবয়স্ক কিছু ব্যাক্তির উপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে, যাদের রক্তে লাইকোপেন এবং বিটাক্যারোটেন এর পরিমান কম তাদের স্ট্রোক এবং হার্ট-এর রোগের ঝুঁকি বেশি। বিটাক্যারোটেন ও লাইকোপেন দুটোই টমেটোতে পাওয়া যায়।

ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখে

পটাসিয়াম সমৃদ্ধ টমেটো ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পটাসিয়াম- একটি প্রয়োজনীয় মিনারেল- যেটা ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখে এবং কার্ডিওভাসকুলার disease প্রতিরোধ করে।

ত্বকের জন্য ভালো

টমেটোতে ভিটামিন “C ” প্রচুর পরিমানে রয়েছে। ভিটামিন “C ” কোলাজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। collagen- ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকের তারুণ্য ফিরিয়ে আনে।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে

ভিটামিন “A ” এবং ভিটামিন “K ” -এর কথা বলবো। একজন মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখার জন্য ভিটামিন “এ ” দরকার। অন্যদিকে ভিটামিন “কে ” রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।

টমেটো জুস এনিমিয়া, কফ্, রিউমেটিকের লক্ষণ দূর করে এবং চামড়ার উজ্বলতা বৃদ্ধি করে। একটা কথা না বললেই নয়- টমেটো ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং কিডনিও ভালো রাখে।

টমেটোর কিভাবে খেলে ভালো?

টমেটো পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে সরাসরি খাওয়া যায়। রান্না করে খেলে খুব বেশি তাপে রান্না করা ঠিক নয়। আজকাল টমেটো জুস খুবই জনপ্রিয় এবং এটা খুবই উপকারী।

টমেটো ভালোভাবে ধুয়ে ব্লেন্ড করার পর রসটা ছেঁকে একটা গ্লাসে নিন। এর সাথে লেবুর রস, চিনি, অল্প পরিমানে বিট লবন মিশিয়ে খান। অনেকে গাজর, অল্প এক টুকরো আদা এর সাথে মিশিয়ে খেয়ে থাকেন

পরিশেষে, আমরা সবাই জানি এবং বিশ্বাস করি, টমেটোতে কার্যকরী উপাদান এতো বেশি রয়েছে যে, হেলথ বেনিফিট-এর কথা চিন্তা করে সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটাকে সুপারফুডস হিসাবে গণ্য করা হয়।

এখন প্রায় সারাবছর টমেটো পাওয়া যায়। তবে শীতকালে বেশি পাওয়া যায় এবং দাম খুব কম থাকে। পুষ্টিগুণে ভরপুর, দামে সস্তা এই সবজিটি বাঙালির খাদ্য তালিকায় থাকুক এবং সবার পুষ্টির চাহিদা পূরণ হোক- এটাই কাম্য।