চুলের যত্নে নারিকেল তেল।
চুলের যত্নের প্রাথমিক উপাদান হল নারিকেল তেল। বহুবছর ধরে চুলের যত্নে নারিকেল তেলের উপর নির্ভর করছেন রূপসচেতন মানুষেরা। বিশেষ করে নারীর চুলের যত্নে নারিকেল তেল অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
নারকেল তেল চুলের প্রোটিনের ক্ষয় হ্রাস করতে এবং চুল স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। চুলের যত্নে আমরা যেসব তেল ব্যবহার করে থাকি সেসব তেলের মধ্যে নারিকেলের তেল সেরা।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নারকেল তেল চুলের যত্নে অন্যতম সেরা তেল। নারকেল তেল মূলত লরিয়িক অ্যাসিড নামে একটি মাঝারি-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড দ্বারা গঠিত। এটি নারকেল তেলকে একটি দীর্ঘ, সোজা কাঠামো দেয় যা চুলের খাদের গভীরে আরও সহজেই শোষিত হয়।
চুলের স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নারিকেল তেলের জুড়ি নেই। শক্ত এবং চকচকে থাকার জন্য শ্রেষ্ঠ উপায় হলো চুলে নারিকেল তেল দিয়ে মালিশ করা। প্রাকৃতিক এই প্রসাধনীটি শুধু চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে তা নয়, নিয়মিত এই তেল ব্যবহারে চুল ও ত্বক ভালো রাখার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
এই তেলে ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “কে” এবং আয়রন রয়েছে। সবচেয়ে কম দামে ও সহজলভ্য হেয়ার কন্ডিশনার হচ্ছে নারিকেল তেল। এই তেল প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিয়ে চুলকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহারে চুল তাড়াতাড়ি বড় হয়।
জেনে নিন যেসব কারণে চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহার করবেন –
কন্ডিশনিং হিসাবে:
নারিকেল তেল দিয়ে কন্ডিশনিংয়ের জন্য আপনার দরকার খাঁটি নারিকেল তেল। তেলটা হালকা গরম করে নিন। এবার চুলে শ্যাম্পু করে তোয়ালে দিয়ে মুছে যতটা সম্ভব শুকিয়ে নিন। এরপর গরম তেল সমস্ত চুলের গোড়ায় ও স্ক্যাল্পে ভালো করে মাসাজ করুন। হয়ে গেলে ভালো করে আঁচড়ে নিন।
এবার একটা তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়ে চুলে জড়িয়ে রাখুন। আধ ঘণ্টা পর তোয়ালে খুলে চুলে আর একবার শ্যাম্পু করে নিন। আর চুলে তেলটা রাখতে চাইলে পরের দিনও শ্যাম্পু করতে পারেন। অন্য যেকোনো তেলের চেয়ে নারিকেল তেল দ্রুত আপনার চুলে শোষিত হয় আর চুল পুষ্টিও পায় ভরপুর।
খুশকি দূর করতে:
এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকি নিরাময়ের জন্য কার্যকর হতে পারে। রাতে শুতে যাওয়ার আগে চুলের গোড়ায় গরম নারিকেল তেল দিয়ে মাসাজ করুন। তারপর আঁচড়ে জট ছাড়িয়ে আলগা একটা পনিটেল বেঁধে নিন। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুদিন করলেই বিদায় নেবে খুশকি।
রোদ থেকে বাঁচাতে:
নারিকেল তেল প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে এবং রোদজনিত ক্ষতির হাত থেকে আপনার চুলকে বাঁচায়। সারা দিন রোদে থাকতে হলে সকালে উঠে চুলে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল লাগিয়ে নিন। কড়া রোদেও চুল থাকবে সুরক্ষিত।
চুলে রং করার আগে:
চুলের রঙের সঙ্গে নারিকেল তেল মিশিয়ে নিলে তা চুলে তাড়াতাড়ি শুষে যায়, রংও হয় দীর্ঘস্থায়ী। গরম নারিকেল তেল হেয়ার কালার বা হেনার সঙ্গে মিশিয়ে নিন তারপর চুলে লাগান। নির্দিষ্ট সময় রেখে তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। প্রাকৃতিক কালার সেফ শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
জট ছাড়াতে:
চুল রুক্ষ হয়ে গেলে জট পড়ে খুব সহজেই। এই জট ছাড়াতে গিয়ে হিমশিম খেলে নারিকেল তেল হালকা গরম করে নিন। এবার চুলের ডগার দিকটায় ধীরে ধীরে তেল লাগান এবং ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকুন। মাঝে মাঝে আঙুল দিয়ে বা মোটা দাঁড়ার চিরুনি দিয়ে জট ছাড়িয়ে নেবেন।
চুলে তেল শুষে গেলে পছন্দমতো স্টাইল করে নিন। ভার্জিন কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল ব্যবহার করলে চুলে তেলতেলেভাব থাকবে না।
চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে:
নারিকেল তেল শুধু যে চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে তা-ই নয়, অত্যাবশ্যকীয় প্রোটিনও ধরে রাখে। ফলে ধোয়ার সময় প্রোটিন ক্ষয় হয় না। চুল শক্ত ও স্বাস্থ্যকর থাকে।
শ্যাম্পু করার আগে নারিকেল তেলের সঙ্গে আমলকি, পিঁয়াজ, তিল, কালো জিরার মত উপাদান মিশিয়ে চুলে মালিশ করা ভাল। চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য বাড়ানোর এ এক সহজ অথচ সুচারু পদ্ধতি।
চুলের বৃদ্ধি ঘটায়:
চুলের বৃদ্ধি জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিই রয়েছে নারিকেল তেলে। লৌরিক অ্যাসিড চুলের প্রোটিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, চুলের গোড়া মজবুত করে ভাঙ্গন রোধ করে। মাথায় খুসকি হলে বা মাথার ত্বক চুলকালে এক চা চামচ নারিকেল তেল কিছুক্ষণ ভালোভাবে ঘষে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুল৷ এতে চুলকানো কমবে, দূর হবে খুসকিও৷
সূর্যের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়:
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির ক্ষতি থেকে চুলকে রক্ষা করতে সহায়তা করে নারিকেলের তেল। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা পেতে এটি আপনার চুলে লাগানো কার্যকর হতে পারে।