আখ শক্তির উৎস, পানিশূন্যতা দূর করে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ও দাঁতের জন্য ভালো।

দেখতে বাঁশের মতো তাই না। কিন্তু, এটা কিন্তু বাশ নয়। শক্ত খোসা দিয়ে ঢাকা মিষ্টি রসে ভরা আখ। ফোম যেমন পানি চুষে নিয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখে। ঠিক তেমনি আখ প্রকৃতি থেকে মিষ্টি পানি চুষে নিয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে। আখ নামে বেশি পরিচিতি হলেও অনেক জায়গায় একে গেন্ডারিও বলা হয়।

আখ বা ইক্ষুর রস দিয়ে চিনি ও গুড় তৈরি করা হয়। আখ শব্দের উৎপত্তি “ইক্ষু” থেকে। এর ইংরেজি নাম: Sugarcane or sugar cane এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Saccharum officinarum. আখের রস আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে, নবশক্তি সঞ্চার করতে এবং মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে পুষ্টিতে ভরিয়ে তুলবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

আখ গোটা পৃথিবীজুড়ে সমান জনপ্রিয়। তবে আখের খোসা কষ্ট করে ছাড়িয়ে অনেকেই খেতে চান না, তাই আখের রসটাকেই অনেকে পছন্দ করেন।আমরা অনেকেই রাস্তা-ঘাটে আখের রস কিনে খেয়েও থাকি। কিন্তু এই আখের রস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না। তাই আমাদের সবসময় আখ চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে অথবা ঘরে আখের রস তৈরি করে খেতে হবে। সব থেকে ভালো হয় আপনি যদি আখ চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে দাঁত মজবুত হবে।

প্রকৃতি যেন সযত্নে নিজের হাতে ভূমির সবটুকু মিষ্টি পানি গুছিয়ে রেখেছে আখ নামক এই লাঠিটার মধ্যে। এতে প্রায় ৭০-৭৫% পানি, ফাইবার ১০-১৫% এবং ১৩-১৫% চিনি সুক্রোজ আকারে রয়েছে। প্রায় ১ টেবিল চামচ সুগারের সমান।

ডায়াবেটিস রোগীরা কি আখের রস খেতে পারবেন?

আখে সুগার খুব বেশি। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক কম থাকার সত্ত্বেও উচ্চ গ্লাইসেমিক লোড রয়েছে। তাই আখ বা আখের রস রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে পারে।

আখের রস নিয়ে টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এর পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট অগ্ন্যাশয়কে আরও ইনসুলিন তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে। তবে এটি যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে নয়। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন তাহলে প্রাকৃতিক মিষ্টি রসের মধ্যে পানি মিশিয়ে খেতে পারেন। তাও পরিমাণ মতো খেতে হবে।

আখের রসের উপকারিতা

আখের রস শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার করে হাইড্রেটেড রাখে। এতে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল যা শরীরকে রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। নিচে আখ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

পানিশূন্যতা দূর করে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে:

ডিহাইড্রেশনের কথা ভাবলেই, প্রথমে যে বিষয়টি মনে আসে তা হল পানি। কার্যকরভাবে এবং সঠিকভাবে পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ইলেক্ট্রোলাইটের প্রয়োজন হয়। পানির মধ্যে যদি খনিজ উপাদান থাকে তখন তাকে ইলেক্ট্রোলাইট বলা হয়। আখে ৭০-৭৫% পানি এবং এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের খনিজ ও ভিটামিন যা পানিশূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করতে সাহায্য করে।

শক্তির উৎস:

আপনি নিজেকে তাড়াতাড়ি পুনরুজ্জীবিত করতে চান? নবশক্তি সঞ্চার করে, মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তুলবে আখের রস বা আখ। আখ শক্তির উৎস হিসাবে কাজ করে। আখের রসে সিম্পল সুগার সুক্রোজ বিদ্যমান। সুক্রোজ খুব সহজেই শরীরে শোষিত হয় এবং প্রচুর শক্তি উৎপন্ন করে।

১৫ জন সাইক্লিং অ্যাথলিটদের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আখের রস ব্যায়ামের পারফরম্যান্স উন্নত করতে স্পোর্টস ড্রিংকের মতো কার্যকর ছিল।

লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়:

আখ জন্ডিসের মতো লিভার সম্পর্কিত অসুস্থতার জন্য অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক চিকিৎসা বলে মনে করা হয়। প্রকৃতির ক্ষারক, আখ দেহে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই কারণে ডাক্তার জন্ডিস রোগীদের আখের রস পান করার পরামর্শ দেন।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে:

আখ ফিনোলিক এবং ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি ভাল উৎস। ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরকে ক্যান্সারজনিত কোষগুলি বিশেষকরে প্রস্টেট এবং স্তনের ক্যান্সার বৃদ্ধি বন্ধ করতে সহায়তা করে।

হজমে সহায়তা করে:

হজমের সমস্যায় ভুগছেন লোকেদের জন্য আখের রস ভাল। আখের রসে থাকা পটাসিয়াম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যা হজমে সহায়তা করে এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে।। এটি পেটের সংক্রমণ রোধেও সহায়তা করে।

কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখে:

প্রাকৃতিক লো-কোলেস্টেরল, কম-সোডিয়ামযুক্ত খাবার আখের রস কিডনিকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। আখের রসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা হল এটি মূত্রবর্ধক যা এর অর্থ এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনিতে পাথর চিকিৎসায় এবং কিডনির যথাযথ কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

হাড় এবং দাঁত বিকাশে সহায়তা করে:

আখ চিবানো ছোট বাচ্চাদের কাছে খুবই মজার একটি বিষয়। যদি দাঁত ক্ষয় রোধের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে আখ চিবিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া প্রতিকার। আখে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মত খনিজ উপাদান থাকে যা দাঁতের এনামেল গঠনে সাহায্য করে।

ব্রণ নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে:

আখের রসের ব্রণের মতো ত্বকের সমস্যা হ্রাস এবং নিরাময় করতে সহায়তা করে। এতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড থাকে যা কোষের টার্নওভার বাড়ায়। এটি ব্রণ গঠনের সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়ে ত্বককেও এক্সফোলিয়েট করে। আখের রসের সাথে মুলতানি মাটি মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে। এই পেস্টটি মুখে ও ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সতর্কতা:

আখের রসে থাকা চিনিটি প্রাকৃতিক, তবে মনে রাখবেন এটি মূলত চিনি। আপনি যদি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত হন বা অন্য কোনো কারণে রেগুলার কোনো মেডিকেল কোর্স-এর মধ্য দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই খাওয়ার আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান সুস্থ্য থাকুন।

রেফারেন্স: