অলস বালক এবং গরুর গল্প।
এক ছিল অলস বালক যে কাজকে খুব ভয় পেত। সারাদিন সে শুধু খেত আর ঘুমাতো। তার এমনই অবস্থা যে সে খাবারটা পর্যন্ত বিছানায় খেত। সারাদিন ঘুমিয়ে কাটানোর ফলে বন্ধুদের সাথে খেলতে যেতে পারতোনা।
যার ফলে সকলে তাকে “অলস বালক” হিসেবেই জানত। অলস বালকের মা যখনই খাবার দিত তখনই ছেলেকে বলতেন যে, তুমি কাজ না করলে মৃত্যুর পর গরু হয়ে যাবে। উত্তরে অলস বালক বলল, “তাও ভালো গরু হলে যেখানে সেখানে ঘুমানো যাবে”।
একদিন তার মা খুব অসুস্থ হয়ে পরলেন এবং ছেলের কাছে পানি চাইলেন। কিন্তু অলস বালক তার মাকে পানি দিল না। মা কষ্ট পেয়ে ছেলেকে অনেক বকলেন। সে তার মায়ের উপর বিরক্ত হয়ে বাড়ী ছেড়ে চলে গেল, যাতে আর মায়ের বকাঝকা শুনতে না হয়।
হাঁটতে হাঁটতে পথে এক বৃদ্ধের সাথে তার দেখা হল। বৃদ্ধ অলস বালককে জিজ্ঞেস করল, কাজ ভালো লাগেনা?
অলস বালক লক্ষ করল বৃদ্ধের হাতে একটি অদ্ভুত মুখোশ। অলস বালক বৃদ্ধের পাশ কেটে যাওয়ার সময় বৃদ্ধ বললেন এই মুখোশটা পরলে সে গরু হতে পারবে, যা অলস বালক হতে চেয়েছিল।
গরু হলে সে যেখানে খুশি সেখানে শুয়ে থাকতে পারবে, ঘাস খেতে পারবে, কেউ তাকে বিরক্ত করবেনা, কাজও করতে বলবে না। অলস বালক খুব উৎসাহ বোধ করল।
বলল, আমাকে কোন কাজ করতে হবেনা? এই ভেবে আনন্দিত হল এবং বুড়োর কাছে থেকে মুখোশটি ছিনিয়ে নিলো।
যখনই অলস বালক মুখোশটি পরল সাথে সাথে সেটি তাঁর মুখে আটকে গেল। অলস বালক যতই বের করতে চায় ততই তা তার চামড়ার সাথে আটকাতে থাকল এবং সে একটি গরুতে পরিণত হল।
বুড়ো তাকে নড়াচড়ার সুযোগ না দিয়ে বেধে ফেললেন এবং কোন কিছু না বলতে দিয়ে “হুস হুস” শব্দ করতে লাগলেন। বুড়ো বললেন যে কথা বলার চেষ্টা করলে চাবুক দিয়ে পেটাবেন।
তারপর গরুর মত দেখতে অলস বালককে নিয়ে বুড়ো বিক্রির জন্য হাটে গেলেন। একজন কৃষক তাকে কিনে নিলেন। বুড়ো কৃষকে বললেন সে যেন গরুকে কোনভাবেই শালগম খেতে না দেয়, কারণ তাতে গরু মারা যেতে পারে।
এমনকি তাকে শালগম দেখানোও যাবেনা। এছাড়া প্রয়োজনে তাকে চাবুক দিয়ে পেটানো লাগতে পারে কারণ সে খুবই অলস।
কৃষক এই ভেবে খুশি যে, যাক একে দিয়ে যত খুশি তত কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে। অলস বালক বলল সে গরু নয় মানুষ, কিন্তু কৃষক বালকের কথায় কোন কান না দিয়ে বেশী বেশী কাজ করাতে লাগলেন। বেশী কথা বলাতে কয়েক ঘা চাবুক মারলেন।
জীবনে এই প্রথম কৃষকের পিটুনি খেয়ে সারাদিন মাঠে কাজ করতে হল এবং কাজ শেষে এক পা নাড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। ভাবল কৃষকের মার থেকে রক্ষা পেতে মাঠেই ফিরে যেতে হবে। আরও ভাবল, মা কেমন আছে। আবার মানুষ হওয়ার সুযোগ পেলে অনেক পরিশ্রম করতে পারতাম।
অলস বালক ভাবল মার কথা মত চললে তার এই অবস্থা হতনা। সে ভাবল এরকম মার খেতে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। সে বুড়োর কাছে শুনেছিল যে শালগম খেলে সে মারা যাবে। মাঠ থেকে ফেরার পথে শালগম ভর্তি একটি গাড়ী দেখতে পেল।
কৃষকের মার উপেক্ষা করে সে শালগমের গাড়িতে লাফ দিয়ে শালগম মুখে দিল। শালগম চিবোতে চিবোতে মার কাছে দুঃখ প্রকাশ করল। যখন সে মুখ ভর্তি শালগম নিল তখন সে তাঁর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেল এবং সে খাট থেকে পরে গেল।
বুঝতে পারল সে স্বপ্ন দেখছিল এবং তখন তার চোখে ছিল কান্নার পানি। এরপর থেকে বালকটি গ্রামের সবচেয়ে পরিশ্রমী বালকে পরিণত হল।