এসিড ও ক্ষারক কাকে বলে? দৈনন্দিন জীবনে এসিড ও ক্ষারকের ব্যবহার সমূহ।

এসিড কাকে বলে?


এসিড শব্দটি ল্যাটিন শব্দ এসিডাস থেকে এসেছে। বাংলায় একে অম্ল বলা হয়। যেসব রাসায়নিক দ্রব্য জলীয় দ্রবণে প্রোটন বা ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন দান করে, তাদের এসিড বলে।

অন্যভাবে বললে বলা যায়, যে সব যৌগ জলীয় দ্রবণে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন (H+) দান করে সেসব যৌগকে এসিড বলে। উদাহরণ: সালফিউরিক এসিড, হাইডোক্লোরিক এসিড (HCl), এসিটিক এসিড, অক্সালিক এসিড ইত্যাদি।

ক্ষারক কাকে বলে?


ক্ষারক এক শ্রেণির রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করতে সক্ষম। যে সকল যৌগ পানিতে হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH-) প্রদান করে, সে সকল যৌগকে ক্ষারক বলে। যেমন: Ca(OH)2 একটি ক্ষারক। কারণ, Ca(OH)2 জলীয় দ্রবণে হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH-) প্রদান করে।

অন্যভাবে বললে বলা যায়, যা অম্ল বা এসিডের সাথে বিক্রিয়ায় লবণ ও পানি উৎপন্ন করে এবং পানিতে OH- আয়ন তৈরী করে তাকে ক্ষারক বলে।

দৈনন্দিন জীবনে এসিডের ব্যবহার:


দৈনন্দিন জীবনে এসিডের ব্যবহার সমূহ:
১. বিভিন্ন টক স্বাদযুক্ত ফল যেমন: কমলা, লেবু, টমেটো, তেতুল ইত্যাদিতে এসিড থাকে। যা আমাদের মুখে রুচি আনে, খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে, ভিটামিন-সি এর চাহিদা মেটায় এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
২. খনি থেকে মূল্যবান ধাতু, যেমন: সোনা আহরণে ও রকেটে জ্বালানির সাথে নাইট্রিক এসিড (HNO3) ব্যবহৃত হয়।
৩. সার কারখানা, বিস্ফোরক প্রস্তুতিতে এসিড ব্যবহার করা হয়।
৪. বহুল ব্যবহৃত ব্যাটারিতে সালফিউরিক এসিড ব্যবহৃত করা হয়ে থাকে।
৫. আমাদের পাকস্থলির দেওয়াল থেকে যে হাইড্রোক্লোরিক এসিড উৎপন্ন হয়, খাদ্য পরিপাকে তা আবশ্যক।
৬. ইস্পাত তৈরির কারখানা, ঔষধ, চামড়া শিল্প ইত্যাদিতে HCl এসিড ব্যবহৃত হয়।
৭. টয়লেট পরিষ্কারে যেসব পরিষ্কারক ব্যবহার করা হয় তাতে এসিড থাকে।
৮. ডিটারজেন্ট ও নানা রকম রং এ H2SO4 ব্যবহৃত হয়।
৯. ঔষধ, কীটনাশক, পেইন্ট, কাগজ, বিস্ফোরক ও রেয়ন তৈরিতে H2SO4 ব্যবহৃত হয়।
১০. সাপের উপদ্রব কমানোর জন্য কার্বোলিক এসিড ব্যবহার করা হয়।

দৈনন্দিন জীবনে ক্ষারকের ব্যবহার:


দৈনন্দিন জীবনে ক্ষারকের ব্যবহার সমূহ:
১. বাসাবাড়িতে পরিচ্ছন্নতার কাজে ক্ষার জাতীয় পদার্থের বেশ ব্যবহার আছে।
২. পাকস্থলীর এসিডিটি নিরাময়ে ব্যবহৃত এন্টাসিড ঔষধ মূলত ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Mg (OH2)] বা অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড [Al(OH)3] দিয়ে তৈরী করা হয়।
৩. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডা (NaOH) টয়লেট ক্লিনার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. কাপড় কাঁচার উপাদান হিসাবে ক্ষারক ব্যবহার হয়।
৫. টুথপেস্ট, বেকিং পাউডার, এন্টাসিড ট্যাবলেটে উপাদান হিসাবে ক্ষারক ব্যবহার হয়।
৬. অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড কাঁচ পরিষ্কারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৭. পানি ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর তৈরি পেস্ট যা মিল্ক অফ লাইম (Milk of Lime) নামে পরিচিত, পোকামাকড় দমনে ব্যবহৃত হয়।
৮. ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের পাতলা দ্রবণ চুনের পানি বা ওয়াটার লাইম বাসাবাড়িতে হোয়াইট ওয়াস করতে ব্যবহৃত হয়।