চুলের যত্নে প্রাকৃতিক তেল কোন গুলো।
বর্তমান সময়ে রূপচর্চা থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। চুল বা ত্বকের যত্নে অধিকাংশ মানুষই কৃত্তিম ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে থাকে। এতে দ্রুত ফল পাওয়া গেলেও পার্শ প্রতিক্রিয়া থাকে। তবে প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে ত্বক যেভাবে রিয়্যাক্ট করে, তা সময় সাপেক্ষ হলেও অধিকতর নিরাপদ।
ফলে চুলের যত্নে আয়ুর্বেদ এবং হারবাল উপাদান গুলোই কিন্তু নিরাপদ। এতে চুল সুন্দর ও ঝলমলে থাকে। প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিতে চাইলে তেল মালিশ করতে হবে। এজন্য ভেষজ তেলই প্রধান।
চুলের যত্নে প্রাকৃতিক তেল
আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক, চুলের যত্নে ভেষজ তেলের উপকারিতা সম্পর্কে-
এসেন্সিয়াল অয়েল:
এসেন্সিয়াল অয়েল চুলের বৃদ্ধি করতে পারে। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পেপারমিন্ট অয়েল:
যাদের স্ক্যাল্প বা মাথার তালু খুব শুষ্ক, তাঁদের জন্য পিপারমেন্ট অয়েল এক মহৌষধি (Peppermint Oil Uses) হিসেবে কাজ করে। অনেকের জন্মগতভাবে চুল এবং মাথার তালু শুষ্ক হয়, আবার অনেকের শুধুমাত্র শীতকালে মাথার তালু শুষ্ক হয়ে যায়। দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু পিপারমিন্ট অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোজ রাতে চুলের গোড়ায় পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল মাসাজ করতে পারেন। নারকেল তেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে আলতো হাতে মাসাজ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন নতুন চুল গজাচ্ছে এবং চুল পড়ার সমস্যাও দূর হয়েছে।
রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল:
খুশকিনাশক হিসেবে রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা হয়। এটি রক্ত চলাচল বাড়ায়। ফলে চুল মজবুত হয়, নতুন চুল গজায়। আর চুলের স্বাভাবিক কালো রঙটি ধরে রাখতেও সাহায্য করে। এছাড়া রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল চুল পড়া কমাতে দারুন কাজ করে।
টি-ট্রি অয়েল:
চা গাছের তেলের (টি-ট্রি অয়েল) শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষায় এমনকি দেখা গেছে যে চায়ের গাছের তেল চুলের বৃদ্ধিতে বেশি কার্যকর ছিল।
খুশকি হলে শ্যাম্পু করার আগে এর সঙ্গে দুই ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় টি ট্রি অয়েল। ফলে চুল যেমন ঘন হয়, তেমনি বাড়েও দ্রুত। নারকেল তেল বা বাদাম তেলে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে গরম করে চুলে ম্যাসাজ করুন।
নারকেল তেল:
চুলের বৃদ্ধি জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টিই রয়েছে নারিকেল তেলে। লৌরিক অ্যাসিড চুলের প্রোটিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, চুলের গোড়া মজবুত করে ভাঙ্গন রোধ করে। মাথায় খুসকি হলে বা মাথার ত্বক চুলকালে এক চা চামচ নারিকেল তেল কিছুক্ষণ ভালোভাবে ঘষে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলুল৷
এতে চুলকানো কমবে, দূর হবে খুসকিও৷ ভিটামিন “ই” এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় নারকেল তেল কন্ডিশনার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
আলমন্ড অয়েল বা কাঠবাদাম তেল:
আমন্ড অয়েলে রয়েছে রাইসিনোলেইক অ্যাসিড। এছাড়া আরও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন “ই”। যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আমন্ড অয়েল চুলের পুষ্টি জোগানোর পাশপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে। তেলটি চুলের pH এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, স্ক্যাল্প থেকে ময়লা দূর করতে এবং মাথার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ধরে রাখতে কাজ করে।
অলিভ অয়েল:
অলিভ অয়েলে ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ভিটামিন “ই” সমৃদ্ধ অলিভ অয়েলে, চুলের বৃদ্ধির জন্য দুর্দান্ত। এছাড়া অলিভ অয়েলের এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য খুশকি মোকাবেলায় সহায়তা করে।
তিলের তেল:
চুলের জন্য আয়ুর্বেদিক তেলের মধ্যে অন্যতম তিলের বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি মাথার ত্বকের সংক্রমণ হ্রাস করতে পারে। তিলের তেল ভিটামিন “ই” সমৃদ্ধ ত্বক এবং চুলের জন্য দুর্দান্ত। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং খুশকি দূর করে চুল বৃদ্ধি করে।