সন্তান কথা শোনে না। অবাধ্য বাচ্চা বা শিশুকে বাধ্য করার উপায়।

অবাধ্য শিশু। কি যে করি? ক্রমান্বয়ে অবাধ্য শিশু সম্পর্কে কী করা যেতে পারে? এই বিষয়ে অনেকের রাতের ঘুম ভেস্তে যেতে বসেছে।

সময়ে সময়ে বেশিরভাগ শিশু তাদের পিতামাতার কথা শুনতে চাই না এবং তাদের ইচ্ছার বিপরীতে কাজ করে বসে। একটু বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে অর্থাৎ শৈশব শেষ হওয়ার সাথে সাথে ও কৈশরে এই সমস্যাটা শুরু হয় বা দেখা যায়।

স্কুল সমস্যা, পারিবারিক চাপ, পিতামাতার মধ্যে অমিল, ঝগড়া ইত্যাদি অনেক কিছুর কারণে সন্তান অবাধ্য হয়ে থাকে।

সন্তান অবাধ্য— এমন অভিযোগ নেই এমন বাবা-মা খুঁজে পাওয়া কঠিন। অবাধ্য ছেলে বা মেয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ে আত্মীয় বা বন্ধু মহলে আলোচনাও কম হয় না। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, কেন কথা শোনে না আপনার সন্তান?

সন্তানের দোষ না পিতামাতার দোষ সেটা থাক, তবে পিতামাতার অনেক করণীয় রয়েছে।

সে যেহেতু আপনার সন্তান তাই আপনাকে শিখিয়ে, বুঝিয়ে উপযুক্ত করে নিতে হবে। বংশগতি বা জিন প্রধান নিয়ামক নয়। গার্ডিয়ান হিসাবে ভালো পরিবেশ, শিক্ষাদীক্ষা নিশ্চিত করুন।

তার সাথে বন্ধুর মতো মিশুন। বাচ্চা যদি আমার মতোই বুঝত তাহলে তো সে বাচ্চা হতো না। এজন্যে সে যেভাবে বুঝবে তাকে সেভাবেই বুঝাতে হবে।

এক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ককে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও মমতাপূর্ণ করা এবং সন্তানকে সবসময় আদেশ-নির্দেশ না দিয়ে উদ্বুদ্ধ করলে, পরিশ্রমী এবং কষ্টসহিষ্ণু করে তুললে সন্তান আপনার কথাই শুনবে।

সন্তানকে কথা শুনাতে যা করবেন:

 তিরস্কার বা সারাক্ষণ আদেশ:

সন্তানকে সবসময় তিরস্কার করবেন না। কোনো একটা কিছু পারলো না বা পরীক্ষায় খারাপ করলো। অমনি বলে ফেললেন। তুমি তো গরু।  তোমার মাথায় কিচ্ছু নেই। এতে তার আত্নবিশ্বাস কমে যাবে। কোনো কিছু করতে ভয় পাবে। অবাধ্য এমনিতেই হয়ে যাবে।

নির্দেশ করতে থাকলে বা তিরস্কার করতে থাকলে সন্তান ভাবতে পারে যে আপনি বোধ হয় তার প্রতিপক্ষ। তাই সন্তানকে তিরস্কার থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনি সন্তানের বন্ধু-এই অনুভূতিটি তার বিকাশের জন্যেই জরুরি।

 আপনার সন্তানকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে মূল্যায়ন করেন:

যত আপনার সন্তান বুঝবে যে আপনি তাকে বোঝেন তত সে আপনার অনুগত হবে। আপনার কথা শুনবে। অতএব তাকে শোনানোর জন্যে আগে তাকে শুনুন। তার কথায় মনোযোগ দিন। তাকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে বোঝেন।

তাকে মাঝে মাঝে গিফট কিনে দিন। তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোন। তার পছন্দের খাবার, হোক না সেটা ফার্স্ট ফুড-মাঝে মধ্যে তার পছন্দের ক্যাফে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়ান।

motherandchild

সন্তানের ব্যাপারে একমত হোন:

সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মার ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ। একই ব্যাপারে বাবা-মা ভিন্ন মত দেবেন না। এতে সন্তান বিভ্রান্ত হয়। আগেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নিন। আর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে তা নিয়ে কখনো সন্তানের সামনে বিতর্কে জড়াবেন না। নিজেরা কথা বলুন।

সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিন:

আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন, জবাবের জন্যে সে হয়তো খুঁজে নেবে এমন কাউকে বা এমন কিছুকে যার পরিণতি আপনার জন্যে অতটা সুখকর না-ও হতে পারে।

জেনারেশন গ্যাপকে মিটিয়ে ফেলুন:

সন্তানের সাথে জেনারেশন গ্যাপের একটা কারণ হলো বাবা-মায়েরা চান তারা তাদের ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, সন্তানও ঠিক তেমন হবে। ফলে এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্যে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই কিছু কিছু ব্যাপারে আপনাকে সহনশীল হতে হবে। সন্তানের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের সাথে আপনার চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের একটা ভারসাম্য আনতে হবে।

momandchild

আপনার অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন সন্তানের মধ্যে দেখতে যাবেন না:

বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান তার সন্তানের মধ্যে। ফলে সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কী হবে তা তারাই ঠিক করে দেন সন্তানের চাওয়া বা সামর্থ্যের বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে। আর পরবর্তীতে তার মাশুল দিতে হয় সন্তানকেই।

সে না পারে বাবা-মায়ের চাওয়া পূরণ করতে, না পারে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। কাজেই বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে তার সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা দিন।

 সন্তানের আত্মমর্যাদাবোধকে নষ্ট করবেন না:

শিশুদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা হয়তো অন্যের সামনে তাকে বকাবকি করি, ভুল ধরিয়ে দেই বা অপ্রস্তুত করি। এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

সন্তানকে তা-ই বলুন যা আপনি নিজেও পালন করেন:

শিশুরা তাদের বাবা-মায়েরা কী বলছে সেটা নয়, কী করছে সেটাই অনুকরণ করে। কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা আপনি নিজেই করেন না।