চুল কালো করার প্রাকৃতিক উপায়।
চুল আমাদের সৌন্দর্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কালো, সুন্দর,ও ঝলমলে চুল আমরা সবাই খুবই পছন্দ করি। কিন্তু বিভিন্ন কারণে যেমন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চুল পেকে যায়। শুধু তাই নয় বর্তমানে কম বয়সেও চুল পেকে যাওয়া একটা সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অল্প বয়সে চুল পড়ে গেলে বা অল্প বয়সে চুল বিবর্ণ হয়ে গেলে কারোরই ভালো লাগে না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং শারীরিক সমস্যা এই দুটি কারণেই কম বয়সে অনেকেরই চুল সাদা হয়ে যায়।
আমাদের শরীরে ভিটামিন “বি” ১২ এর অভাব হলে বা থাইরয়েড গ্ল্যান্ড এর অসমক্ষরণ অকালেই আমাদের চুল সাদা করে দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান, কম ঘুম, অপুষ্টি ইত্যাদি নানা কারণে কম বয়সে অনেকেরই চুল পাকা শুরু করে।
সাদা চুলের রং পরিবর্তন করার জন্য বাজারে নানা ধরণের হেয়ার কালার পাওয়া যায়। যেগুলি অনেক সহজেই সাদা চুল কালো করে দিতে পারে। তবে এতে মিশ্রিত রাসায়নিক অনেক সময় আমাদের চুল রুক্ষ করে তোলে এবং এর ফলে চুল পড়তে শুরু করে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক চুল কালো করার প্রাকৃতিক উপায়গুলি সম্পর্কে-
নারকেল তেল এবং লেবুর রস:
নারকেল তেল চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে, চুলের বৃদ্ধি করে এবং চুলকে পুষ্টি দেয়। এছাড়া লেবুতে ভিটামিন “সি” রয়েছে। এটি চুল কালো করতে সাহায্য করে। এতে ২ চামচ নারকেল তেল এবং ১ চামচ লেবুর রস প্রয়োজন।
এই দুটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে তা চুলে ভালো করে মাসাজ করতে হবে। তারপর ৩০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
আমলকী এবং মেথির প্যাক:
এই প্যাকটি চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করবে এবং চুলকে করবে হেলদি। কয়েক টুকরো আমলকী, ১ চামচ মেথির গুড়ি, ৩ চামচ তেল নারকেল তেল নিন।
তারপর চুলায় তেল গরম করুন। তেল গরম হলে আমলকী দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ পর এতে মেথি গুঁড়া দিতে হবে।
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশে নামিয়ে ফেলুন। তারপর ঠাণ্ডা হলে চুলে ব্যবহার করুন সারারাত মাথায় রেখে। সকালে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
আলুর খোসা:
চুল কালো করতে আলু বেশ কার্যকরী। আলুর খোসাতে স্টার্চ থাকে, যা চুলে রঙিন রঞ্জক ধরে রাখে এবং চুল সাদা হওয়া রোধ করে।
৫-৬ টা আলুর খোসা, দুই কাপ পানি দিয়ে ফুটে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর চুলের গোড়ায় লাগান। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চায়ের প্যাক:
চুলকে কালো করতে লাল চায়ের কোনও বিকল্প নেই। এক কাপ জলে ২ চামচ চা পাতা দিয়ে ফোটান। ফুটে গেলে চা ঠাণ্ডা করে ছেঁকে চুলে দিয়ে এক ঘণ্টা রেখে দিন।
এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে নিন।
জবাফুল:
জবাফুল গাছে ভিটামিন “সি” এবং খনিজ থাকে। আপনি যদি চুল পড়া সম্পর্কে চিন্তিত হন তবে হিবিস্কাস এটির সাথে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে।
ভিটামিন “এ” এবং “সি” এর পাশাপাশি অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ হিবিস্কাস চুলের ক্ষতি রোধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এটি খুশকিও নিরাময় করে এবং অকালে চুল পড়া বন্ধ করে। জবা ফুল বেঁটে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল কুচকুচে কাল হয়।
কয়েকটা জবাফুল আর একমুঠো জবা ফুল গাছের পাতা এক সাথে পেস্ট করে নিন। তার সঙ্গে তিন টেবিল চামচ আমলা গুঁড়ো মিশিয়ে একটু পানি দিয়ে পাতলা করে নিন।
মাথায় আর চুলে ভালোভাবে মেখে একঘণ্টা রাখুন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নেবেন। সপ্তাহে বার দুয়েক করলেই চুল কালো হতে শুরু করবে।
পেঁয়াজের রস:
১টি পেঁয়াজ, ১ চামচ অলিভ অয়েল লাগবে। প্রথমে, পেঁয়াজটি ভালো করে টুকরো টুকরো করে কেটে ১ চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মাখিয়ে রেখে দিন।
এরপর পাতলা কাপড়ের মধ্যে মিশ্রণটি রেখে ভালো করে চিপে রসটি বের করে নিন। এটি চুলে লাগিয়ে আধ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
মেহেদি এবং কফির প্যাক:
মেহেদি চুলের জন্য অনেক ভালো। এটি প্রাকৃতিকভাবে চুলকে কালো করে। অপরদিকে, কফিতে রয়েছে ক্যাফিনের মত শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা চুল মজবুত এবং শাইনি করে।
এই প্যাকটি চুলের গোড়া মজবুত করতেও বেশ কার্যকরী। মেহেদি পেস্টের সাথে ১ টেবিল চামচ কফি ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে দিন।
এবার জ্বাল হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। প্যাকটি ঘণ্টা খানেক রেখে দিন, এরপর চুলে ব্যবহার করুন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
আপনি চাইলে এই মিশ্রণে নারকেল অথবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।