এলাচ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, আলসার নিরাময়ে ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
এলাচ একটি তীব্র ঘ্রাণ, কিছুটা মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি মশলা। এই মসলাটিকে কিছু কিছু লোক পুদিনা পাতার সাথে তুলনা করে। যদি গোল মরিচকে মশালার রাজা হিসাবে বিবেচনা করা হয় তবে এলাচ মশালার রানী। বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান মশলা হল এলাচ।
এলাচ সংস্কৃততে “ইলা” এবং হিন্দিতে “এলাইচি”, আয়ুর্বেদেও এর ব্যবহার রয়েছে। এলাচ ইংরেজিতে:Cardamom, Elaichi এবং বৈজ্ঞানিক নাম: Elettaria cardamomum.
প্রধানত এলাচ দুই ধরনের হয় সবুজ এলাচ এবং কালো এলাচ। পায়েস বা মিষ্টিতে এলাচ ছাড়া তো হবেই না। মিষ্টির কথা যখন হচ্ছে তাহলে রসগোল্লা বাদ যাবে কেন।
এছাড়া বিভিন্ন রান্নাতে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং গোল মরিচ একত্রে গরম মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
এলাচের উপকারিতা
এলাচ শুধু রান্নায় স্বাদ ও গন্ধই যোগ করে না, এর আরও অনেক আশ্চর্য স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে যা আমাদের অজানা। নিচে আর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
আয়ু বৃদ্ধি করে:
চীনা ঐতিহ্য অনুসারে এলাচ চা দীর্ঘায়ু লাভের উপায় হিসাবে পরিচিত। এলাচি চা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে এবং অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলি পরিষ্কার রাখে।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশুতোষ গৌতম পরামর্শ দিয়েছেন যে, এলাচ এমন একটি মশলা যা সুস্থ্য থাকতে এবং আয়ু বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনই খাওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে:
উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন লোকদের জন্য এলাচ বন্ধু হতে পারে। একটি সমীক্ষায় গবেষকরা উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন ২০ জন প্রাপ্ত বয়স্ককে দিনে ৩ গ্রাম করে ১২ সপ্তাহ এলাচ গুঁড়ো খেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
১২ সপ্তাহের পরে, সেসব লোকেদের রক্তচাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। গবেষকরা মনে করেন যে মশলাটি তার মূত্রবর্ধক প্রভাবের কারণে রক্তচাপকে কমিয়ে দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করে:
এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধ করে। এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। এলাচ পেটের যে কোনো সমস্যা যেমন- বদহজম নিরাময়ে সহায়তা করে।
ক্যান্সার কোষ প্রতিরোধী:
ক্যান্সারের কোষের সাথে লড়াই করতে পারে এলাচ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এলাচের গুড়ি কিছু নির্দিষ্ট এনজাইমের ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে যা ক্যান্সারের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে।
অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এই মশালার একটি নির্দিষ্ট যৌগ ওরাল ক্যান্সার কোষকে বন্ধ করে দেয়।
দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে:
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বিশিষ্ট্যের কারণে এলাচ আমাদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এলাচে থাকা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস আমাদের দেহের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি হতে বাধা দেয়।
আলসার নিরাময়ে:
হজমে সহায়তা করতে এলাচ হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অস্বস্তি এবং বমিভাব দূর করতে এটি প্রায়শই অন্যান্য ঔষধি মশলার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
এটি পেটের সমস্যাগুলি দূর করার পাশাপাশি আলসার নিরাময় করতে পারে।
অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এলাচের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক আলসারগুলির আকারকে কমপক্ষে ৫০% হ্রাস করতে পারে।
মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে:
মুখের দুর্গন্ধের চিকিৎসায় এবং মুখের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এলাচের ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকে। এর কারণ এলাচ সাধারণত মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পাঁচটি ব্যাকটেরিয়া যেগুলি দাঁতের গহ্বরের কারণ সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এলাচির নির্যাস কার্যকর ছিল। এলাচের নির্যাস লালার ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ৫৪% কমাতে পারে।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:
এলাচ ফুসফুসে বায়ুপ্রবাহ বাড়িয়ে তুলতে এবং শ্বাস প্রশ্বাস উন্নত করতে পারে। এলাচ শ্বাসকষ্ট এবং অক্সিজেনের ব্যবহার উন্নত করতে পারে। এটি হাঁপানির চিকিৎসা জন্য বিশেষত সহায়ক।
একটি সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একদলকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে ট্র্যাডমিলের উপর দিয়ে হাঁটার আগে এক মিনিটের জন্য এলাচ তেল শ্বাস নিতে বলা হয়েছিল। এতে তাদের ব্যায়ামের সময় দেহে অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
কাশি এবং সর্দি নিরাময়:
এলাচ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পরিপূর্ণ। দুটি জাতীয় এলাচ রয়েছে সবুজ এবং কালো এলাচ। কালো এলাচ সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের নিরাময় করতে সহায়তা করে।
এক্ষত্রে এলাচ চা খেতে পারেন প্রথমে এলাচ পানিতে দিয়ে ভালো করা ফুটিয়ে নিয়ে তার মধ্যে চা পাতি দিয়ে আবার একটু জাল করে তার সাথে মধু দিয়ে খেয়ে নিন। ফ্লু রোগের কার্যকর প্রাকৃতিক প্রতিকার এই এলাচ চা।
রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে:
রক্তে শর্করাকে কমিয়ে দিতে পারে এলাচ। ২০০ জনেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের একটি সমীক্ষায়, আট সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তারা ৩ গ্রাম দারুচিনি, এলাচ বা আদা দিয়ে চা পান করেন।
ফলাফলে দেখা গেছে দারুচিনি, এলাচ, আদা চা পান করার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে।
লিভার সুরক্ষা:
এলাচ উন্নত লিভার এনজাইম, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। লিভার বৃদ্ধি এবং লিভারের ওজনও রোধ করতে পারে, যা ফ্যাটি লিভারের রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
সতর্কতা
যা কিছু খাবেন পরিমাণমতো খাবেন। আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে খাবেন। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।
আপনি যদি কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা নিয়মিত কোনো মেডিকেল কোর্স-এর ভেতর দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। এলাচ গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো শিশু এবং মহিলাদের পক্ষে উপযুক্ত নাও হতে পারে।